শুকিয়ে যাওয়া মেয়েটা কেমন যেন মরেও বেঁচে গেল,
সত্যি কি বেঁচে গেল? নাকি বাঁচতে বাঁচতে মরে গেল!
বাবা চা বাগানের ঠিকাকর্মী, বাবুদের বাড়িতে রান্না করে মা।
কতদিন খাবার জোটে না, আধপেটা খেয়ে দিন কাটে,
মাঝে তো আবার চা বাগান বন্ধ ছিল কতদিন!
কি সব আন্দোলন করতে গিয়ে চাকরীটা চলে যায় আর কি?
মেয়েটার মা বাবুর পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে আর কি...
টাকার অভাবে অবন্তী’র যখন পড়াশুনা বন্ধ ঘোষণা হওয়ার অপেক্ষায়।
সরকার বাহাদুর ঢাক পেটাল, মেয়ের টাকা দেবে বলে।
‘মেয়ে আপনার, দায়িত্ব আমাদের’। কন্যাশ্রী, সবুজসাথী আরও কত কি......!
আজ মনে হচ্ছে মেয়ে হওয়ার মধ্যে কি আনন্দ!!!
বন্ধপ্রায় পড়াশুনা শুরু হল আবার, বেঁচে যায় অবন্তী।
বেঁচে যায় বাংলার মেয়ে, বাঁচে বাংলার সম্ভ্রম।
সবুজ চা বাগানের অলিগলি বেয়ে অবন্তী যেন হাওয়ায় ভেসে চলে।
দূর বাগানে বাবা চা বাগানের ব্যস্ততায় চোখের কোণে জল মোছে।
বাবুর বাড়ির ছাদে কাপড় মেলতে গিয়ে অশ্রুভরা চোখে তাকায়।
হটাত করে পাওয়া আনন্দে সরকার বাহাদুরকে দুহাত তুলে জানায় প্রণাম।
সাইকেল ছোটে, ছোটে অবন্তী, সীমানা জানে না কেউ।
দিন যায়, মাস যায়, অবন্তী আর আগের মতো মন মরা নয়।
অভাবের সংসারে হাসি আসে, লাবন্য ফেরে অবন্তীর।
অষ্টাদশী মেয়ের চিন্তায় বাবা মা’র রাতের ঘুম উড়ে যায়,
অবন্তীর হাতে স্মার্টফোন, ফেসবুক, হোয়্যাটস্অ্যাপ করতে জানে আজ।
মহালয়া পেরিয়ে আজ দুদিন কেটে গেছে,
পূব আকাশে ভোরের আলো তখনও ফ্যাকাশে।
অবন্তী বেরিয়ে যায়, পড়ে স্কুল করে বাড়ি ফিরবে।
টাকা তুলে এনেছে অবন্তী গতকাল ব্যাঙ্ক থেকে,
রতনের বাইকে তেল ভরে দিল মেয়েটা,
সবার অজান্তে চা বাগানের সীমানা ছাড়িয়ে...।
দূর পাহাড়ের ঝরনা যেখানে, অবন্তী যখন স্বপ্নে বিভোর।
ক্ষুধার্ত সিংহের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে বখাটে রতন।
হারিয়ে গেল আঠারোটা বসন্তের চাঁপাফুলের কলি।
মুহূর্তের বিড়ম্বনায় অবন্তীর জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
পাহাড়ের কোলে সূর্যটাও আস্তে আস্তে লজ্জায় মুখ ঢাকে।
অনেক রাত হয়ে গেল, মেয়েটা বাড়ি ফেরে না সেদিন।
মা বাবা বুকে পাষাণ চাপিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে যায়।
‘বাবু, একটু দেখবেন, আমার মেয়েটা এতরাত হয়ে গেছে...’
-বুঝেছি, বুঝেছি, এই ভুটিয়া, মেয়েটিকে নিয়ে আয় দেখি।
প্রায় চ্যাংদোলা করে নিয়ে এলো অবন্তীকে, হুঁশ নেই একটুও।
চোখের জলে ঝাপসা হয়ে এল দৃষ্টি, অবন্তী নেই কোথাও।
আছে শুধু বুকভরা স্বপ্ন, কন্যাশ্রীর লাশ আর একটা এটিএম কার্ড।
রচনাকাল : ১৪/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।