জীবন দর্শন (প্রথম পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : সনৎকুমার পুরকাইত
দেশ : India , শহর : ডায়মন্ডহারবার

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ৯৭ টি লেখনী ৪০ টি দেশ ব্যাপী ৩৭৪২৪ জন পড়েছেন।
               জীবন, জরা, ব্যাধি, মৃত্যু, দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণার গভীরতা কত? আমরা প্রত্যেকে নিজের জীবনে ঘটে চলা নিত্যদিনের ঘটনা দিয়ে তা পরিমাপ করে থাকি। কিন্তু আপেক্ষিকতাবাদের নিরিখে হয়তো তা কিছুই নয়। গত কয়েকমাস যাবত নিজের সাথে নিজের দীর্ঘলড়াই আর জীবনের স্বাদ গ্রহণ করার পাশাপাশি মৃত্যুযন্ত্রণা অনুভব হতে হতে একটা সময় মনে হয়েছিল জীবনের লড়াই এত কঠিন? কি হবে বেঁচে থেকে? তার সাথে নিকটজনের এক অভূতপূর্ব আচরণ দেখে জীবনে বেঁচে থেকেও মৃত্যুর কাঠিন্য অনুভব করে মনে হয়েছিল এর থেকে অনেক সহজ মৃত্যুপুরীতে ভ্রমণ করা। যখন সবকিছু অন্ধকার, নিজের সকল প্রাপ্তির মাঝে এ যেন এক অনিবার্য সর্বনেশে পরিণতি। একদিন একান্তে যখন এমন ভাবনা মাথায় ঘুরছে সেইসময় সামনে এল এক অসামান্য ছবি, যা দেখে মনে হল আমার এই যন্ত্রণা অনেক অনেক কম। ফিরে আসতে শুরু করলো জীবনের স্পন্দন টিকিয়ে রাখার মনোবল। 
                ছবিটিতে দেখা যায় একটি পাহাড়ি হরিণ যখন সারাদিন দূর পাহাড়ে তৃণগুল্ম খেয়ে আশ্রয়ে ফিরছিল ঠিক তখন পাথরে পা পিছলে দুই পাথরের মাঝখানে এমনভাবে আটকে যায় যে সে শত চেষ্টা করেও আর উঠতে পারে না বরং আরও নিজেকে সেই পাথরের মাঝে হারিয়ে যেতে সাহায্য করে। লোভের বশবর্তী হয়ে এতদূরে সে চলে গেছিল যে কেউ সেখানে সচরাচর যায় না। যদি কোন প্রাণী যায় তারা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে অক্ষম। তাই জীবনের যে কটা দিন সে বেঁচে ছিল, প্রতিদিন ক্ষুধাকে সঙ্গী করে বাঁচার জন্য প্রাণপণ চিৎকার, মৃত্যুকে সামনে দেখে হতাশ হয়ে রোদ, জল, ঝড়ের মাঝেই নিজেকে সঁপে দেওয়া আর সৃষ্টিকর্তার কাছে তার এই অপরিসীম লোভের জন্য অনুশোচনা করার মাঝেই তিলেতিলে প্রতিদিন মরেছে। যে ভদ্রলোক প্রথম দেখেছেন বা যিনি ছবি তুলেছেন তিনি হয়তো এই ভয়াবহ পরিণতি দেখে শিউরে উঠেছিলেন।
              এখানেই প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে জানাই যে গুরুকরণ করার সার্থকতা বর্তমান আছে ঐ ছবির মাঝে। যদি কোন মালিকের গৃহপালিত গরু ছাগলের মত এই হরিণ কারুর আশ্রয়ে থাকতো তাহলে দিনের শেষে যখন সে না ফিরত, নিশ্চয়ই তার মালিক তাকে খুঁজে ঠিক ফিরিয়ে নিয়ে আসতো। এমন যন্ত্রণাময় মৃত্যু তো দূরের কথা, একটুও মৃত্যুযন্ত্রণা তাকে সইতে দিত না। ঠিক মানবজীবনের এই দিশাহীন চলার পথে যদি সঠিক গুরুর সঠিক মার্গে আমরা অবস্থান করে আমরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব পালনে ব্রতী হয়ে থাকি তাহলে আমরাও জীবনের স্বাদ আর মৃত্যুর গহন অন্ধকার অনায়াসে এক করে দিতে পারবো। আশ্রয় হয়ে শরণাগত হলে তবেই পূর্ণ সাত্ত্বিক জীবনের স্বাদ মেলে। নইলে কুকুর বিড়ালের মত ইতর প্রাণের মত মানুষের মহামূল্যবান জীবন দগ্ধে শেষ হবে শুধু অহমিকার জালে। 
               শাস্ত্রমার্গ অনুসারে জীবনের আনন্দ এতটাই বেশী যে মানুষ মরতে ভুলে যায়, মৃত্যুতে ভয় পায়। মানুষ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সেই অন্ধকার কূপে মাথানত অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে বলে, হে প্রভু, তুমি আমাকে এই অন্ধকার কূপ হতে উদ্ধার করো, আমি তোমার গুণকীর্তন করবো। সেই ডাকের মধ্যে যে আন্তরিকতা ছিল, তার ফলশ্রুতি হিসাবে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে আসে আলোর মাঝে জীবনের স্বাদ নিতে। কিন্তু ধরাতে এসে এত আলো পেয়ে যায় যে পূর্বের প্রতিশ্রুতি সব ভুলে গিয়ে নিজের সামর্থ্য নিয়ে বড়াই করতে করতে জীবন চলে যায়। সেই জীবনে থাকে শুধু অহমিকা আর সুখের সাগরে থেকে অ-সুখের যন্ত্রণা। ঠিক তখন আবার স্মরণ করে সেই তৃতীয় পুরুষকে। এভাবেই চাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষতে কষতে প্রকৃত জীবনের মানেই বোঝেই না অনেকেই। 
               জীবন যখন নিজের খেয়ালে চলে, সবকিছু প্রত্যাশামত প্রাপ্তি হয় তখন মনে হয় জীবন কত সুন্দর। মনে আসে বাঁচার আনন্দ। আর এই বাঁচার আনন্দের মাঝে ধীরে ধীরে তৈরি হয় জীবনমৃত্যুর প্রভেদ এবং সঠিক মার্গে থাকতে থাকতে মানুষের জাগ্রত হয় এক নবচেতনা, যে চেতনার সাহায্যে পার্থিব সকল বিষয় থেকে নিজেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অধিকারী হয়ে ওঠে এক অপূর্ব অলৌকিক ক্ষমতার। যে ক্ষমতা তাঁর নিজের পরিশ্রম আর অধ্যয়নের মধ্যে দিয়ে অর্জন করে তাঁর মধ্যে আসে বিনয় ও তিতিক্ষা। সেখানেই তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে পারেন জীবন আর মৃত্যুর মাঝে কোন পার্থক্য নেই। 
              ঠিক সেদিন থেকে আপনি পেতে শুরু করেন মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা। একজন আপনার পাশ থেকে সরে গেলেও আপনার চারিদিকে শুভাকাঙ্ক্ষীর বলয় তৈরি হয়। আপনার জীবনবোধের তেজ সহ্য করতে না পারলে দুরাচারী, পাপাচারী, ব্যাভিচারি আপনার সংসর্গ ত্যাগ করতে পারে। কিন্তু, যারা এই মার্গ সন্ধানে ছিল, তারা আপনার মানবসত্ত্বাকে উপড়ে ফেলে প্রদান করে দেবত্ব। সেইস্তরে বাঁচামরা সবেতেই আপনার হাস্যবদন পরিলক্ষিত হবে। ভালোবাসা, প্রেম, প্রীতি, সহানুভূতি, দয়া, মায়া এসকল আবেগের মাঝে মানুষের বেঁচে থাকা। যখন এই আবেগ কেটে গিয়ে বেগ আধিপত্য বিস্তার লাভ করে তখন ফুটে ওঠে অহমিকা আর অপরকে ছোট করার বাসনা। সেখানেই পৃথক হয়ে যায় মানুষের বেঁচে থাকার স্বাদ আস্বাদনের মহিমা। 

রচনাকাল : ১৪/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 5  France : 1  Germany : 2  India : 88  Ireland : 3  Romania : 1  Russian Federat : 14  Sweden : 11  Ukraine : 3  
United States : 67  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 5  France : 1  Germany : 2  
India : 88  Ireland : 3  Romania : 1  Russian Federat : 14  
Sweden : 11  Ukraine : 3  United States : 67  
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
জীবন দর্শন (প্রথম পর্ব) by Sanat Kumar Purkait is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৬১৫২
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী