#বিরিয়ানি প্রেম
#সন্তু প্রামাণিক
গ্রীষ্মের দাবদাহে যেমন একপষলা বৃষ্টি দেহমনে এক অন্যরকম প্রেম নিয়ে আসে তেমনি বিরিয়ানি ছিল আমার জীবনের বিশেষ প্রেম। আমি সজল, চাকরী সূত্রে বাংলার বাইরের থাকি। বছরে কয়েকবার বাড়িতে যখনই আসতাম আমার বিরিয়ানি প্রেম এক অন্য মাত্রা পেত। চাকদহের একান্ত-আপন ,বনগাঁর সম্প্রীতি, ব্যারাকপুরের দাদা-বৌদি ছাড়াও আশেপাশের সব বিরিয়ানি দোকানগুলোতে এতোবার ঢুঁ মেরেছি যে তার ইয়াত্তা নেই। বেশ কয়েকমাস আগে যখন চাকরী সূত্রে হায়দারাবাদ গিয়ে সেখানকার স্পেশাল বিরিয়ানি খেলাম তখন তার স্বাদে গন্ধে যে পরিমান ভালোবাসা পেয়েছিলাম তাতে চোখে জল এসে গেছিলো।
ইদানিং কলকাতা আর শহরতলীতে যে পরিমান ভাগাড়ের মাংসের বিরিয়ানির খবর পেলাম তাতে আমার বিরিয়ানি প্রেমে একটুকুও ভাটা পরেনি। এবার ভেবেছি এমন একজন নারী কে বিয়ে করবো যে কিনা বিরিয়ানি বানাতে সিদ্ধহস্তা। আমার বাড়ি আসার খবর একজন বিশেষ বান্ধবীকে দিলে সে তার বাড়ীতে নিমন্ত্রণ করে বসে। সে অবশ্য আমার বিরিয়ানি প্রেমের কথা জানতোই। আমি অবশ্য সুযোগ হাতছাড়া করবার পাত্র নই। শর্তসাপেক্ষ তার বাড়ীতে যেতে রাজী হই।
অবশেষে সেইদিনটি এলো যেদিন আমি আমার কলেজের বান্ধবী সুলগ্নার বাড়ীতে উপস্থিত হলাম। বাইরে থেকেই বিরিয়ানির সুবাস আমার নাকে এসে যেন বলছিল সে আমাকে সারাজীবন তার স্বাদে -গন্ধের প্রেমে মাতিয়ে রাখবে। আমার মাথায় অবশ্য অন্য ভাবনা ঘুরছিলো। ভাবলাম সুলগ্নার হাতের বিরিয়ানি যদি আমার বিরিয়ানি প্রেম এ অন্যমাত্রা এনে দেয় তাহলে আজই প্রোপোজ করবো ওকে। তাহলে আমার যেমন আর ভাগাড়ের ভয়ে বিরিয়ানি প্রেমে ভাটা পরবে না তেমনি মায়ের জন্যে বউমাও পেয়ে যাবো। যাইহোক এত কিছু ভাবার মধ্যেই গোগ্রাসে বিরিয়ানি গিলছিলাম, খেয়ালই ছিলনা আমার সামনে একটা মেয়ে করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। একটা কথা কিন্তু ঠিক আমি আর আমার প্রেমিকা বিরিয়ানির মাঝে যতই তৃতীয় ব্যক্তির আগমন হোকনা কেন আমার কিছু যায় আসেনা। অবশেষে খাওয়া শেষ করা প্রমান সাইজের গোটাকতক ঢেঁকুর তুলে একটু আত্মবিশ্বাস জোগাড় করছিলাম,কারন এবার আমার আর আমার প্রেমিকার মিলন হতে চলেছে সুলগ্নার মাধ্যমে।
কিভাবে প্রোপোজ করবো ভাবছিলাম এমন সময় দেখি সুলগ্না ঘেমে -নেয়ে একাকার।এতক্ষণ তো ওকে দেখারই সময় ছিলনা আমার হাতে, আমি যে প্রেমে ব্যস্ত ছিলাম। কারন জানতে চাইলে বলল এই দুপুরের গরম আর বিরিয়ানির দোকানের লম্বা লাইন ই দায়ী। হঠাৎ যেন মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ল।শরতের নির্মল আকাশে হঠাৎ মেঘ করে বৃষ্টি যেমন সব আনন্দ মাটি করে দেয় তেমনি আমার অবস্থা হলো। সুলগ্নার হাতের বিরিয়ানি প্রেমে পড়া আর হলোনা। আবারও হয়তো সেই ভাগাড়ের বিরিয়ানির পিছু নিতে হবে।
রচনাকাল : ১৩/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সন্তু প্রামাণিক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।