মা লক্ষ্মীর মর্ত্যে আগমন
(পৌরাণিক নাটক)
রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
তৃতীয় অংক তৃতীয় দৃশ্য
[বনপথ]
[কুঠার হস্তে রতন কাঠুরিয়া ও তার স্ত্রী মুক্তার প্রবেশ]
রতন: হলো না মুক্তা হলো না, কাঠ সংগ্রহ করা হলো না। আজও বোধ হয় আমাদের উপবাসী থাকতে হবে।
মুক্তা: কিছু একটা করো স্বামী, কাঠ না পেলে কি নিয়ে বাজার যাব? বাজারের সবাই আমাকে আঙুল দেখিয়ে বলবে কাঠ কই, কি জবাব দেব আমি।
রতন: [বনের একপ্রান্তে চেয়ে থাকে] আরে! উত্তরের ওই শালগাছটার ওপরে একটা বিরাট শুকনো ডাল। বোধ হয় উপায় একটা হয়েছে।
[কুঠার হস্তে অগ্রসর, পিছনে স্ত্রী মুক্তা প্রস্থানোদ্যত হতেই
কমলার প্রবেশ। কাঁখে রত্নখচিত সুদৃশ্য কলস। ]
কমলা: দাঁড়াও! তার আগে কথা দাও তোমরা আমার পূজা করবে।
রতন ও মুক্তা: কে মা তুমি? এই গভীর বনে
একাকিনী বিচরিছ হেথা।
কহ কেবা তুমি?
কমলা: বিষ্ণুজায়া আমি। বৈকুণ্ঠে বসতি।
পূজা হেতু আসিয়াছি মর্ত্যধামে।
কর পূজা, দুঃখ হবে নিরসন।
বিষ্ণুর বনিতা আমি। কহিলাম সার।
মর্ত্যলোকে হউক মোর পূজার প্রচার।
রতন: অব্রাহ্মণ আমি। তব পূজার বিধি নাহি জানি।
মুক্তা: কেমনে করিব পূজা বলি দাও মোরে।
কমলা: শুনহ জীবের জীবন বচন আমার।
পূজিলে ভক্তিভরে মোরে
দুঃখ যাবে দূরে। প্রতি বৃহস্পতিবারে
সাজাইবে্ মঙ্গল ঘট আমার।
ধান্য দূর্বা দিয়ে। গঙ্গাজলে ভরিবে ঘট।
তাহে আম্রশাখা। সশীষ ডাব রাখি
সম্মুখে বরণডালা ফুল মালা আর।
ধূপদীপ জ্বালি ভক্তিভরে পূজিবে আমারে।
উভয়ে: প্রণমি চরণে মাতঃ।
[সাষ্টাঙ্গে প্রণাম]
[সহসা কমলা লক্ষ্মী অদৃশ্যা হন]
মঞ্চের আলো জ্বলে ওঠে। ধীরে ধীরে রতন ও মুক্তা
কাঠ আহরণ করে এবং গৃহাভিমুখে গমন করে।
দৈববাণী: রতন ও মুক্তা, তোমরা নিজ ঘরে যাও।
আমার পূজা কর। বাঞ্ছিত ফল পাবে।
[নেপথ্যে পাঁচালির সুরে গীত ধ্বনিত হয়। ]
সেদিন কাষ্ঠ রতন পাইল প্রচুর।
বাজারে বিক্রয় করি দুঃখ হল দুর।
প্রতি বৃহস্পতিবারে করে লক্ষ্মীপূজা,
সদয়া হলেন মাতা লক্ষ্মী চতুর্ভূজা।
[দৃশ্যান্তর]
রচনাকাল : ১২/৬/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।