মা লক্ষ্মীর মর্ত্যে আগমন
(পৌরাণিক নাটক)
রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দ্বিতীয় অংক দ্বিতীয় দৃশ্য
[ব্রাহ্মণবাড়ীর অভ্যন্তর]
মঞ্চের মধ্যভাগে মা লক্ষ্মীর প্রতিমূর্তি
[গীতকণ্ঠে ব্রাহ্মণী তুলসীর প্রবেশ]
তুলসী: শঙ্খ বাজিয়ে মাকে ঘরে এনেছি
আমের পল্লব দিয়ে ঘট পেতেছি।
পান সুপারি সিঁদুর দিলাম দু’হাত ভরে।
জনম জনম থেকো আমারই ঘরে।
এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে…..
[ভক্তিভরে প্রণাম করে]
[মাদকাসক্ত ব্রাহ্মণ ত্রিলোচনের প্রবেশ।
হাতে সুরার পাত্র]
ত্রিলোচন: বন্ধ কর। বন্ধ কর। আমার বাড়িতে লক্ষ্মীর পূজা করা চলবে না।
তুলসী: [ভীত কণ্ঠে] স্বামী!
ত্রিলোচন: লক্ষ্মী নেই। লক্ষ্মী মরেছে। লক্ষ্মীর নাম করে একদল অলক্ষ্মীর দল
তাদের পতিব্রতারূপে জাহির করে নিজেদের সংসার-ধর্মকে কলুষিত করছে। মনে পড়ে তুলসী একদিন পূজা করতে গিয়ে যজমানের কাছে আমার অপমানের কথা। আমি ভুলিনি ……..ভোলা যায় না। অপমান -নিদারুণ অপমান। আর তাই আমি সেজেছি মদ্যপ। মদ্যপান করাটা আজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। পূজার্চনা ছেড়ে আমি একটু শান্তিতে থাকতে চাই।
তুলসী: ওই ছাই পাঁশ তুমি আর খেও না গো। ওতে শরীর খারাপ হবে।
ত্রিলোচন: ছাই পাঁশ নয় তুলসী, ছাইপাঁশ নয়, এর নাম অমৃত। মূহুর্তে সমস্ত অবসাদ, সমস্ত গ্লানি, সমস্ত দুঃখ জ্বালা, অপমানের নিদারুণ জ্বালা সব কিছু মুছে দিয়ে, দেয় অমৃতলোকের সন্ধান। তাইতো বলি এর নাম অমৃত।
তুলসী: অমৃত নয় গরল। ওই গরল তুমি আর ছোঁবে না। ওই বিষ তুমি স্পর্শ করবে না।
ত্রিলোচন: প্রথম যেদিন মদ খেতে শুরু করলাম, সেদিন তুমি কিন্তু বাধা দাও নি। তোমার চোখের সামনে ধীরে ধীরে আমি প্রকাশ্যে মদ খেতে শুরু করলাম। সেদিন যদি তুমি আমায় বাধা দিতে তাহলে আমার এ অবস্থা হোত না। আমি-
তুলসী: স্বামী!
ত্রিলোচন: আমি ভেঙে দেব তোমার লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট। ছুঁড়ে ফেলে দেব ফুল মালা ফলমূল নৈবেদ্য। মা লক্ষ্মীর বিগ্রহ আমি ভেঙে চুরমার করে দেবো।
[পদাঘাত করিতে উদ্যত]
তুলসী: তোমার দুটি পায়ে ধরি স্বামী। অমন কাজ তুমি কোর না। ঘরের অমঙ্গল হবে।
ত্রিলোচন: কোন এক মাঙ্গলিক ক্ষণে তোমায় ঘরে এনেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি আমার কথামত চলবে। আজ দেখছি তার উল্টো। আমার ঘরে অলক্ষ্মীর পূজা হবে না। হতে পারে না।
[সজোরে পদাঘাত করে ঘট ও নৈবেদ্য ফেলে দেয়।]
[সহসা কমলার আবির্ভাব। হাতে প্রস্ফুটিত পারিজাত]
তুলসী: মা—মাগো—
[মূর্ছিতা হয়ে পড়ে]
ত্রিলোচন: একি! চতুর্দিকে এত আলোক প্রভা।
সম্মুখে, পশ্চাতে, চতুর্দিকে এত আলো কেন?
বাতাসে শিহরণ! কে কে ওখানে?
কমলা: কে আমি? পার কি চিনিতে?
লক্ষ্মী আমি, বিষ্ণুজায়া, তব আরাধ্যা দেবী।
পূজা কর ব্রাহ্মণ। পাইবে বাঞ্ছিত ফল।
ধনরত্ন বিত্ত-বৈভব সব পাবে তুমি
পুজিলে আমারে। অন্যথায়—
ত্রিলোচন: অন্যথায়?
কমলা: দিব অভিশাপ। অভিশাপে মম
হইবে সর্বনাশ।
জায়া তব পতিব্রতা অতি।
সন্তোষিতা আমি তার প্রতি।
সুরাসক্ত পূজারী ব্রাহ্মণ!
দুটি পথ সম্মুখে তোর
আমার পূজন অথবা অকল্যাণ।
কিবা চাস তুই।
ত্রিলোচন: জীবন থাকিতে মম
না পূজিব অলক্ষ্মীরে আমি।
কমলা: রে পাপাচারী ব্রাহ্মণ!
মদ্যাসক্ত তুই। রে নরাধম!
দেবার্চনা ছাড়ি নরকের পথ আজি
ইপ্সিত তোর। দিনু অভিশাপ।
হোক অকল্যাণ গৃহে তোর।
অন্নহীন, বস্ত্রহীন নির্বংশ হবি তুই।
অন্নকষ্টে যাবে দিন বলিলাম আমি।
[চকিতে মা কমলা লক্ষ্মীর অদর্শন]
[দৃশ্যান্তর]
রচনাকাল : ১২/৬/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।