মা লক্ষ্মীর মর্ত্যে আগমন
(পৌরাণিক নাটক)
রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
=================
চরিত্রলিপি
শ্রীবিষ্ণু- বৈকুণ্ঠাধিপতি
কমলা- ঐ ভার্যা
নারদ- ঐ ভক্ত ও গায়ক
জনৈক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণের স্ত্রী, রতন কাঠুরিয়া ও কাঠুরিয়ার স্ত্রী, জনৈক বণিক
এবং গ্রামবাসীগণ ইত্যাদি।
প্রথম অংক প্রথম দৃশ্য
[বৈকুণ্ঠলোক]
মঞ্চের চতুর্ভিতে ঘূর্ণায়মান বিভিন্ন রকমের আলোকপাত।
মিউজিকে যাত্রার সূচনার সুর।
[গীতকণ্ঠে নারদের প্রবেশ। হাতে বীণা, অন্য হাতে ঠুংরি কর্তাল]
নারদ: নারায়ণ…… নারায়ণ
কোথা তুমি নারায়ণ?
কোন ঠাঁই প্রভু তব দেখা মিলে
কোথা পাব তব দরশন।
নারায়ণ…… নারায়ণ
[পূর্ব – গীতাংশ]
পাপী তাপী উদ্ধারে,
আসিয়াছ বারে বারে
ওগো প্রভু শ্রী মধুসূদন।
নারায়ণ…… নারায়ণ
কোন ঠাঁই প্রভু তব দেখা মিলে
কোথা পাব তব দরশন।
[ বৈকুণ্ঠাধিপতি শ্রী বিষ্ণুর আবির্ভাব]
নারদ: প্রণমি চরণে প্রভু!
শ্রীবিষ্ণু: বত্স নারদ! কিবা অভিপ্রায় তব?
নারদ: দেবপূজা ত্যজি মর্ত্যবাসী ব্যাভিচারে রত।
ক্ষুধায় কাতর মর্ত্যবাসী,
নাহি পায় ক্ষুধার অন্ন।
পরিত্রাহি রবে করিছে চিত্কার।
শ্রীবিষ্ণু: ধৈর্য ধর নারদ! আছে প্রতিকার
অনাচারে রত সদা মর্ত্যের মানব।
দেব-অর্চনায় নাহি মন। সুরাসক্ত ব্রাহ্মণ
ছাড়ি পূজার্চনা কুকর্মে রত সদা।
নারদ: কি হবে প্রভু?
পেতে পরিত্রাণ ত্রাণতরে কি হবে উপায়?
শ্রীবিষ্ণু: কেন চিন্তা কর অকারণ?
অবশ্য পাবে তারা পরিত্রাণ। যদি করে
কমলার পূজা। মর্ত্যে হবে প্রচলন লক্ষ্মীর পূজা।
কমলা কমলা—
[কমলার আবির্ভাব। হাতে প্রস্ফুটিত শতদল]
কমলা: আদেশ করুন প্রভু। হে প্রাণাধিক।
কহ প্রভু, ডাক কি কারণ?
কি সে বারতা?
নারদ: মা তুমি চঞ্চলা মন ।
সর্বদা ঘোরো ভবন হতে ভবন ।।
তাই মর্ত্যবাসী কষ্ট কত পায় ।
দেখি তাহা কেমনে মম প্রানে সয় ।।
অন্নাভাবে লোকে কত কষ্ট ভোগে ।
মরিতেছে অনাহারে কৃশকায় রোগে ।।
কমলা: হতেছে সংশয়। মর্ত্যবাসী সবে
দেবপূজা কেন নাহি করে।
নারদ: ধর্মাধর্ম লোকে সবে ত্যাগ করি দেয় ।
স্ত্রী কন্যা বিক্রি করে ক্ষুধার জ্বালায় ।।
দুর্ভিক্ষে হইলো শেষ মরে জীবগন ।
দয়া করে মাগো তুমি করো নিবারন ।।
এই দুর্দশা দেখি প্রাণে নাহি সয় ।
করো নিবারন মাগো হইয়া সদয় ।।
কমলা: বিশ্বমাতা আমি দেবী বিষ্ণুজায়া ।।
যে যেমন করে সে তেমন পায় ।
সে দোষে কর্মফল, করে হায় হায় ।।
মহামায়ার স্বরূপে নারী সত্যবচন ।
মর্ত্যবাসী না মানে এই কথন ।।
সদাচার কুল শীল দিয়া বিসর্জন ।
ঘরের লক্ষ্মীকে করে সদা বর্জন ।।
এমন মনুষ্যজাতি মহাপাপ করে ।
কর্ম দোষে লক্ষ্মী ত্যাজে তাহারে ।।
নারীর পরম গতি স্বামী ভিন্ন কেবা ।
ভুলেও না করে নারী পতি পদসেবা ।।
শ্রীবিষ্ণু: কমলা! অনাচারে রত মর্ত্যবাসী। নাহি পূজে
দেব দেবী। পূজার্চনা ছাড়ি কুকর্মে রত সব
পূজারী ব্রাহ্মণ। তাই-
কমলা: তাই-
শ্রীবিষ্ণু: যেতে হবে কমলা তোমায় মর্ত্যে। তব পূজা
সারা মর্ত্যবাসী করুক ভক্তিভরে। যদি পারে
তুষিতে তোমায়। পাবে পরিত্রাণ নতুবা-
নারদ: সৃষ্টি যাবে রসাতলে। সংহার সংহার প্রভু।
করহ উপায়।
শ্রীবিষ্ণু: নারদ! যাহ তুমি কমলা সহিতে।
মর্ত্যধামে হউক কমলার পূজা।
[প্রস্থান]
নারদ: তথাস্তু। এসো মাতা যাই মর্ত্যভূমে।
কমলা: তাই হোক নারদ। চল ত্বরা করি।
রক্ষিতে প্রভুর আদেশ যাই মর্ত্যলোকে।
[পূর্ব- গীতাংশ]
নারদ: নারায়ণ…… নারায়ণ
কোথা তুমি নারায়ণ?
কোন ঠাঁই প্রভু তব দেখা মিলে
কোথা পাব তব দরশন।
নারায়ণ…… নারায়ণ
দৃশ্যান্তর
[গীত কণ্ঠে কমলা সহ প্রস্থান]
রচনাকাল : ১২/৬/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।