ছোট্টসোনা গোল্ডিলকস আর তিনটি ভালুকের গল্প
Goldilocks and three bear
Source-19.th centuries Fairy tales
মূল লেখক- রবার্ট সাউথি
সে অনেকদিন আগের কথা। এক দেশে ছিলো তারা তিনটি ভালুক। ইয়া বড় বাবা ভালুক, গোলগাল মা ভালুক, আর তাদের একটি ছোট্ট শিশু ভালুক। জঙ্গলের ভেতর একটি সুন্দর কুঁড়েঘরে থাকতো তারা।
একদিন সকালে মা ভালুক তাদের সকালের খাবারের জন্য পনির বানিয়ে দিলো। কিন্তু পনির টা এত গরম ছিলো যে মুখে দেয়া যাচ্ছিলো না, তাই তারা তিনজন ঠিক করলো বাইরে থেকে একটু বেড়িয়ে আসবে, ততক্ষণে সেটা ঠান্ডা হয়ে গেলে তারা নিশ্চিন্তমনে খেতে পারবে।
তারা চলে যাবার একটু পরেই গোল্ডিলকস নামের একটি ছোট্ট মেয়ে সেখানে এলো। গোল্ডিলকস আসলে বনের ভেতর ফুল তুলছিলো আর আপনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো, তখনই এই ভালুকদের ঘরটা তার চোখে পড়ে। তাতেই সে খুব অবাক হয়ে হেসে উঠে হাততালি দিয়ে বলেছিলো 'বাহ, কি সুন্দর ঘর! কিন্তু কে থাকে ওখানে?' কৌতূহলি হয়ে সে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে তাকালো ঘরের ভেতর। তারপর ভাবলো, কেউ তো এখন নেই এখানে।
তারপর পায়ে পায়ে সে দিব্যি ঢুকে গেলো ঘরটার ভেতরে।
প্রথমেই তার চোখে পড়লো খাবার টেবিলের ওপর রাখা তিন বাটি পনির। বাবা ভালুকের জন্য বড় বাটি, মা ভালুকের জন্য মাঝারি বাটি আর ছোট্ট ভালুকের জন্য ছোট বাটি। গোল্ডিলকস দেখলো, চমৎকার সুগন্ধ আসছে সেই পনিরের বাটিগুলো থেকে।
ততক্ষণে তার একটু খিদে পেয়ে গিয়েছিলো কাজেই সে তুলে নিলো একটা চামচ, তারপর গিয়ে দাঁড়ালো বাবা ভালুকের জন্য রাখা বড় বাটিটার সামনে। তারপর একটুখানি নিয়ে মুখে দিলো।
উহ, এ তো দেখি ভীষণ গরম! মুখ পুড়ে গেলো আমার! চমকে উঠে বললো সে।
তারপর সে মা ভালুকের পনির টা চেখে দেখলো। কিন্তু সেটা আবার ছিলো বেজায় ঠান্ডা।
তারপর সে ছোট্ট ভালুকের পনির টা মুখে দিলো, আর তার মনে হলো এটাই সবচেয়ে ঠিকঠাক আছে। তাই সে মনের আনন্দে সেটা একেবারে সবটুকু খেয়ে ফেললো।
তখন তার চোখ পড়লো ফায়ার প্লেসের পাশে রাখা তিনটি চেয়ারের দিকে। বাবা ভালুকের জন্য বড় চেয়ার, মা ভালুকের জন্য মাঝারি চেয়ার আর ছোট্ট ভালুকের জন্য ছোট চেয়ার। তার মনে হলো, চেয়ারগুলোতে একটু বসে দেখলে মন্দ হয় না। কাজেই সে বাবা ভালুকের বড়সড় চেয়ারটাতে চড়ে বসলো।
নাহ, এই চেয়ারটা বড্ড শক্ত! ভাবলো সে।
তারপর সে গিয়ে বসলো মা ভালুকের চেয়ারটায়। কিন্তু সেই চেয়ারটা আবার একটু বেশিই নরম।
অবশেষে বাচ্চা ভালুকের চেয়ারটায় বসে সে সবচেয়ে আরাম পেলো।
কিন্তু যেই না আয়েশ করে সে সবেমাত্র একটু গা এলিয়ে বসেছে, অমনি দুম করে সেই চেয়ারটা গেলো ভেঙে!
চেয়ার ভেঙে পড়ে গিয়ে তো বেচারি একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ধুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করলো নিজেকে। তারপর ঘরের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো ওপরতলায়। সেখানে তার চোখে পড়লো পরপর সাজানো তিনটি বিছানা, যথারীতি বাবা ভালুকের জন্য একটা, মা ভালুকের জন্য একটা, আর বাবু ভালুকের জন্য একটা।
হাই তুলে সে বললো, এবার বোধহয় একটু ঘুমোনো যায়!
কাজেই সে বিছানার চাদর তুলে বাবা ভালুকের বড় বিছানাটায় উঠলো, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তাকে নেমে আসতে হলো, কারণ সেটা ছিলো অনেক শক্ত।
তখন সে গেলো মা ভালুকের মাঝারি বিছানায়, কিন্তু সেটা ছিলো অনেক বেশি নরম।
বাকি রইলো বাবু ভালুকের বিছানাটা। সেটায় উঠে তার মনে হলো, বাহ! এটাই তো সবচেয়ে ঠিকঠাক আছে। তাই সে খুব দ্রুতই সেখানে ঘুমিয়ে পড়লো।
গোল্ডিলকস যখন ঘুমোচ্ছিলো ঠিক সেই সময় ভালুক তিনটি ঘরে ফিরে এলো। বনের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে তাদের অনেক খিদে লেগে গিয়েছিলো তাই তারা পনির টুকু খাওয়ার জন্য খুব উদ্গ্রীব হয়ে ছিলো।
কিন্তু টেবিলের সামনে এসেই তারা হতবাক হয়ে গেলো।
বাবা ভালুক চেঁচিয়ে উঠলো, কেউ একজন আমার বাটির পনির খেয়েছে।
মা ভালুকও চেঁচিয়ে উঠলো, কেউ একজন আমার বাটির পনির খেয়েছে।
আর বাচ্চা ভালুকটি কেঁদে উঠে বললো, আর আমার বাটির পনির টুকু সবটা খেয়ে ফেলেছে!
তখন তাদের নজর গেলো ফায়ার প্লেসের ধারে তাদের চেয়ার তিনটির দিকে।
বাবা ভালুক খেঁকিয়ে উঠে বললো, কেউ একজন আমার চেয়ারে বসেছে।
মা ভালুকও খেঁকিয়ে উঠে বললো, কেউ একজন আমার চেয়ারে বসেছে।
আর বাচ্চা ভালুকটি কেঁদে উঠে বললো, কেউ একজন আমার চেয়ারে বসেছে আবার চেয়ারটা ভেঙেও ফেলেছে!
তারপর তারা সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলো তাদের শোবার ঘরে।
বাবা ভালুকটি হুঙ্কার দিয়ে বললো, কেউ একজন আমার বিছানায় শুয়েছে।
মা ভালুকও হুঙ্কার দিয়ে বললো, কেউ একজন আমার বিছানায় শুয়েছে।
আর বাচ্চা ভালুকটি কেঁদে উঠে বললো, আর আমার বিছানায়ও কেউ একজন শুয়েছে, আর এই তো সে!
আর ঠিক তক্ষুণি গোল্ডিলকসের ঘুম ভেঙে গেলো। বিস্ফোরিত চোখে সে দেখলো বিছানার পাশে সেই তিনটি ভালুককে, তারপর বিছানা ছেড়ে পড়িমরি করে ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে! তারপর এমন এক দৌড় দিলো যে নিজের বাড়ি না পৌঁছানো পর্যন্ত ভয়ে সে আর পিছু ফিরে তাকালোই না!
সেই তিনটি ভালুকও আর কোনওদিন গোল্ডিলকসকে দেখতে পেলো না।
অনুবাদ- দেবমাল্য মুখোপাধ্যায়
রচনাকাল : ১১/৬/২০২০
© কিশলয় এবং দেবমাল্য মুখার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।