তিতলি
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখিকা : অস্মিতা ভাদুরী
দেশ : India , শহর : Konnagar

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ১৪ টি লেখনী ৩২ টি দেশ ব্যাপী ৭৭০৩ জন পড়েছেন।
বিস্বাদ হয়েগেছে তিতলির মনটা । ভেঙ্গে খানচুর হয়ে গেছে স্বপ্ন গুলো । তছনছ হয়ে গেছে সব আশা । ধূলিসাৎ হয়ে গেছে এতদিনের তিল তিল করে গড়ে তোলা রাজপ্রাসাদ। হ্যাঁ ভালবাসার রাজপ্রাসাদ । 

গতকাল রাত দেড়টা পর্যন্ত সমরেশ অন্য কারো ফোন কলে ব্যস্ত ছিল। দুটো ফোনে বারবার রিং করা সত্তেও রিং ব্যাক করেনি সমরেশ । বাকি রাত টুকু তিতলি ছটফট করে করে অবসন্ন শরীর আর ভগ্ন মনে বেরিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে। কোথায় যাচ্ছে ও জানেনা, কেন যাচ্ছে তাও জানেনা । 
প্ল্যাটফর্মে এসে একটা  টিকিট কেটে উঠে পড়েছে তিতলি । জানালার ধারে বসায় ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটায় কিছুটা সম্বিত ফেরে। হ্যাঁ এটাই ।ও যেন রাত থেকে পাগলের মতো বা অর্ধ অচেতন অবস্থায় ছিল । কিন্তু কেন ? কেন এত উত্তেজনায় অস্থির ও । ঘটনাটা কি একদিনের ? একদিনের অবহেলা কি ওকে এরকম পাগল করেছে ? করেছে ঘরছাড়া ? 

চিন্তার দুরন্ত স্রোতের ঘূর্ণিপাকে ঘুরপাক খাচ্ছে তিতলি । একটার পর একটা ষ্টেশন আসছে চলে যাচ্ছে । কোনদিকে আজ আর ওর ভ্রুক্ষেপ নেই । এই ট্রেনের যাতায়াত ওর বড় প্রিয় ।প্রিয় দিগন্তের সূর্যাস্ত বা পূবের সূর্যোদয় । নীল আকাশ , তাতে সাদা মেঘের ঘোরাফেরা দেখতে দেখতে কতদিন ও ভুলে গেছে সব কিছু । সব দুঃখ , সব কষ্ট , সব অবহেলা , অনাদর , বিশ্বাসভঙ্গ সব স .....ব । কিন্তু আজ ওর সব বাঁধ ভেঙ্গেছে ।অন্য কোন কিছুই আজ আর দেখতে পাচ্ছেনা তিতলি । হকার্সদের চিৎকার, যাত্রীদের কোলাহল কিছুই ও আজ শুনতে পাচ্ছেনা । 

গমগম করে ট্রেনটা কোন ব্রীজে উঠল বোধহয় ।অন্যদিন ও দেখে ব্রিজের চারদিকের সৌন্দর্য , আজ ওর চোখ কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা । 

অনেক করে সমরেশ কে বুঝিয়েছিল ও । ভালো মন্দ সব দিকটা। সমরেশও ওর মাথায় হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল , আর এইরকম হবেনা। সে কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করেছিল তিতলি । দূর থেকেও সমরেশ যখন বলতো '' আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি , নিশ্চিন্তে ঘুমোও তুমি। তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা '' । এই কথা গুলো সত্যি ভাবতে বড় ভালো লাগতো ওর । বারবার বিশ্বাস করেছে , বারবার ঠ্কেছে। না , আর নয় । আর পারছেনা তিতলি । 

অচেনা অজানা একটা ষ্টেশনে নেমে, পায়ে পায়ে তিতলি এগিয়ে যায় দূরের নদীটার দিকে। পাড়ে বসে স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে নদীর জলের দিকে। অভিমানে ফুলে ফুলে ওঠে ওর নিষ্পাপ ঠোঁট দুটো। চোখ জ্বালা করছে খুব। না ঘুমিয়ে আর কেঁদে কেঁদে। একটু মুখে চোখে জল দিলে হয়। 

একপা একপা করে জলের দিকে এগোতে এগোতে ভাবে, নাঃ সমরেশ কে ও মুক্তিই দেবে।ও বনের পাখি। কোনদিনই ও কারো নিজের হবেনা। উড়ে বেড়াবে, ঘুরে বেড়াবে , টুকটুকে ফল দেখলে ঠোকরাবে। এতেই ওর আনন্দ । তবে তাই হোক । কিন্তু তিতলির মনে একটাই চিন্তার  উথাল পাথাল ঢেউ। টুকটকে ফল খেতে গিয়ে যদি বিষফল খেয়ে ফেলে ওর সমরেশ ? তাহলে ? তাহলে কি হবে ? ভাবতেপারেনা ।

 মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে । পা ফসকে বেসামাল শরীরটা এঁটেল মাটিতে হড়কে চলে যায় নদীর বুকে অনেকটা গভীরে। আর্ত চিৎকারে ভরে ওঠে বালুচর 

'' সমরেশ ! তিতলি তোমায় মুক্তি দিয়ে গেল। তুমি ভালো থেকো ''। 

 পরক্ষণেই দুরন্ত ঘুর্ণির স্রোত নিমেষে নিশ্চিহ্ন করে দিল স্বপ্নের আকাশে ঘুরে বেড়ানো ছুটে বেড়ানো ছটফটে তিতলি র নরম শরীর । যে শুধু একটু ভালোবাসাই চেয়েছিল আর পরিবর্তে পেয়েছিল অপরিসীম অবহেলা ।
রচনাকাল : ১০/৬/২০২০
© কিশলয় এবং অস্মিতা ভাদুরী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 7  China : 6  France : 2  Germany : 3  Hungary : 1  India : 77  Ireland : 3  Russian Federat : 4  Saudi Arabia : 5  Sweden : 12  
Ukraine : 7  United States : 103  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 7  China : 6  France : 2  Germany : 3  
Hungary : 1  India : 77  Ireland : 3  Russian Federat : 4  
Saudi Arabia : 5  Sweden : 12  Ukraine : 7  United States : 103  
লেখিকা পরিচিতি -
                          ১৯৯১ সালের ১১ই জানুয়ারি হাওড়া জেলার অখ্যাত গ্রাম হিরাপুরে জন্মগ্রহণ করেন অস্মিতা। বর্তমানে কোন্নগরবাসী এই লেখিকার, ছোট থেকেই লেখা লিখির প্রতি ঝোঁক ছিল। মূলত মা কে দেখেই অনুপ্রেরণা পান লেখিকা। পেশায় শিক্ষিকা হলেও শখ বলতে নিজের ছোট্ট বাগানের ও পোষ্যদের পরিচর্যার পাশাপাশি গান শুনতে ভীষন ভালোবাসেন। বেড়ানো, ছবিতোলা, নাচের কোরিওগ্রাফ করা শখের মধ্যেই পড়ে। কলম যেহেতু তলোয়ারের চেয়েও  শক্তিশালী, তাই নিজের বলতে না পারা সব কিছুর প্রতিবাদ লেখা দিয়েই করেন। 

ভালো থাকায় ও ভালো রাখায় বিশ্বাসী হয়ে, পরিচিত অক্ষর ও শব্দ দিয়েই , নতুন গল্পমালার সৃষ্টি করেন ! 
                          
© কিশলয় এবং অস্মিতা ভাদুরী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
তিতলি by Asmita Bhadury is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩৬০৮
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী