ট্রেনের জানালার ধারে বসেছিলেন এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক ।
ছোট্ট ছেলেটি তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছিল বাইরের পৃথিবীটাকে।
জানালার কাঁচে ফর্সা টুকটকে গাল ঠেকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিল ----
জানালার ওপারেও কি এরকম বসার জায়গা আছে?
একইরকম মানুষ আছে ? আমিও আছি ?
ওর মনের কথা বুঝতে পেরে,
প্রৌঢ় তুলে দিলেন জানালার কাঁচ ।
তাঁর দিকে ফিরে ,
যেন মুক্তির স্বাদ পেয়েছে ,
এমন ভঙ্গিতে মুচকি হাসলো
ছেলেটি ।
এখন দৃষ্টিপথে নিজের অবয়ব উধাও। গাছপালা, ঘরবাড়ি, সবকিছু ছুটে চলেছে শিশুমনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ।
মা একবার সাবধান করলেন
'' বাইরে হাত দিয়োনা, জানালায় ধূলো, মুখেও আঙ্গুল দিওনা। ''
চোখ না সরিয়ে ঘাড় নাড়ল ছেলেটি ।
একেকটা প্ল্যাটফর্ম আসছে আর বড্ড লোকের ভিড়, গন্ডগোল ।
কত কিছু আছে ওই লোকগুলোর কাছে । কত খেলনা। বন্দুক ,লাট্টু, দম দেয়া ভালুক কেমন ড্রাম বাজাচ্ছে কি সুন্দর .....আরে ওই তো পিচকিরিও আছে ।
ছেলেটি ফিরল এবার মায়ের দিকে ।
চোখের ইশারায় কিনে দেয়ার মিনতি ।
'' দোলের দেরী আছে খোকন'' ..........
অভিমানী চোখ আবার জানালার বাইরে ।
পরের ষ্টেশনে আবার চেঁচামেচি , গন্ডগোল ।
সুরটা যেন একটু বেসুরোই লাগছে সকলের কানে ।
একটা বড় পাথরের টুকরো ,
ছুটে এলো জানালার দিকে,
ছেলেটি অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে ,
দুনিয়ার বিস্ময় আর লাল গাঢ় রক্তে মাখামাখি কচি মুখটা ।
'' মাগো ! তুমি যে বললে , দোলের দেরী আছে, ওরা কেন রং দিল আমায় ? ? ? ? ?
সূর্যদেবও তখন তার সমস্ত রং ঢেলে আকাশের বুকে মুখ লুকোতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন
নিদারুন লজ্জা,ঘৃণা আর অপরিসীম অক্ষমতায়, যন্ত্রণায় ।
রচনাকাল : ৯/৬/২০২০
© কিশলয় এবং অস্মিতা ভাদুরী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।