অপেক্ষার প্রাপ্তি
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : সিয়াম মুস্তাফিজ
দেশ : বাংলাদেশ , শহর : ঢাকা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মে
প্রকাশিত ২ টি লেখনী ১৫ টি দেশ ব্যাপী ৪৫৩ জন পড়েছেন।
Sìam Sìam
হ্যা, সে এসেছে। আমি আমার অতি পরিচিত সেই পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি। 
আমি তার জন্য অপেক্ষা করেছি; দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।
স্টেশনের টিটি থেকে শুরু করে প্লার্টফর্মের কর্নারের ঐ যে পুরনো, জরাজীর্ণ হলুদ বেঞ্চিটা— সবাই আমাকে বলেছিল, 'চলে যাও। সে আসবে না।'
কিন্তু সে এসেছে। ট্রেনের ঝনঝনানিতে পঁচে যাওয়া কানেও আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি তার নিশ্বাসের মিহি শব্দ।
না, আমি একদমই অবাক হইনি। আমি জানতাম সে আসবে একদিন। শরৎ এর শুভ্র আকাশের রূপে ধরা দেবে আমার পানসে বিকেলে।
টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া হয়ে আমার সাদামাটা বসন্ত রাঙিয়ে তুলবে উৎসবে। 
অথচ সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে! 
সবাইকে আরো অবাক করে দিয়ে সে আমার আরেকটু কাছে এসে, আরেকটু গা ঘেঁষে বসলো।
বুকটা আমার ধরফর করছে। বুঝতে পারছি, সে কিছু একটা বলবে। আচ্ছা কী বলবে সে?
নাকি, আমিই কিছু বলে বসবো। একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছে করছে আমার— 'এতো শুকিয়ে গেছো কীভাবে! কী অবস্থা হয়েছে শরীরের।'
এর উত্তরে সে যদি বলে, 'তোমাকে ছাড়া আর কিছুদিন থাকলে আরো বিধ্বস্ত হয়ে যেতাম।'
অবশ্য এই কথা শুনেই আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠবো না। আমার অভিমান ভাঙাতে হলে সোজা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমাকে কথা দিতে হবে, যেন আর কখনো আমাকে এভাবে একা রেখে হুটহাট করে হারিয়ে না যায়। 
ওহ! সে আমাকে ডাকছে,
- এই শোনো।
- বলো।
- এখনো এই স্টেশনে পড়ে আছো! চুল-দাড়ির কী জঘন্য অবস্থা তোমার! 
আমি চুপ। এই কথার কি উত্তরই বা দেবো আমি।
- আচ্ছা, তোমাকে একটা কথা বলার জন্য এসেছি।
- বলো, এত আমতা আমতা করার কী আছে! (রাগ দেখাতে হবে, বোঝাতে হবে– ভারি অভিমান জমেছে আমার)
- আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। 
এইটুকু বলে সে খুব গম্ভীর হয়ে গেল। আমি এই প্রথম একটু অবাক হলাম। কষ্টও পেলাম। মনে মনে বললাম, কেন এসেছো! কেন! দূর হও। দূর হও।
ঠিক তখন সে মুখটাকে শক্ত করে বললো,
- কিন্তু বিয়েটা কিছুতেই করবো না আমি। প্রয়োজনে স্টেশনের এই ভাঙাচোরা বেঞ্চিতে তোমার সাথে থেকে থেকে জটপাকানো চুলওয়ালী পাগলী হয়ে যাবো। তাও...
এই পর্যন্ত এসে কথার মাঝখানে তাকে থামিয়ে দিলাম। বললাম,
- কী যা তা বলছো! আমরা এক্ষুনি কাজি অফিসে যাবো। তারপর বাসা খুঁজবো, এবং নতুন বাসায় উঠে প্রথমে ঘরদোর ঝাড়ু দিয়ে আমাদের রুমটা সাজাবো।
(শেষের কথাটা বলার সময় গোঁফ দাড়ির আড়ালে আমার দুষ্টু হাসিটা চাপা পড়ে গেল।)
আমার এতটুকু কথা শুনেই সে আমার ময়লা শরীরটাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি ছাড়িয়ে নেয়ার মিথ্যে অভিনয় করছি। 
আসলে আমার বেশ ভালোই লাগছে। বুকটা যেন ফ্রিজের ঠান্ডা,শীতল পানিতে ভিজে উঠেছে। 
অবশেষে বললাম,
- উহু, আগে গোসল করে চুল-টুল কামিয়ে ফ্রেস হয়ে আসি। এখন ছাড়ো তো।
ততক্ষণে আশেপাশে মানুষের ভিড় জমে গেছে। 
ওদিকে সে খুব লজ্জা পাচ্ছে। কী সুন্দর লাগছে তাকে! আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছি। অদৃশ্য সেফটিপিনে দৃষ্টিটা আটকে আছে তার ফুলে ওঠা লাল গালের সাথে।
আহা, মানুষগুলো চলে যাচ্ছে কেন? আরো কিছুক্ষণ থাকলে ভালো হতো। অবশ্য আমারও হাতে সময় নেই। অনেক কাজ জমে আছে। সব যেন লাইব্রেরীর বইগুলোর মতো স্তুপ হয়ে আছে। 
আজ অনেকদিন পর নিজেকে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে।
জীবন, তুমি কী অপূর্ব! কী যাদুময়ী!


 

রচনাকাল : ২৮/৫/২০২০
© কিশলয় এবং সিয়াম মুস্তাফিজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 4  Canada : 3  China : 7  Europe : 1  France : 4  Germany : 2  India : 122  Ireland : 2  Japan : 2  Russian Federat : 5  
Saudi Arabia : 1  Sweden : 13  Ukraine : 8  United Kingdom : 2  United States : 72  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 4  Canada : 3  China : 7  Europe : 1  
France : 4  Germany : 2  India : 122  Ireland : 2  
Japan : 2  Russian Federat : 5  Saudi Arabia : 1  Sweden : 13  
Ukraine : 8  United Kingdom : 2  United States : 72  
© কিশলয় এবং সিয়াম মুস্তাফিজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
অপেক্ষার প্রাপ্তি by Sìam Sìam is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৬২৮০৫৮
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী