||•দুঃস্বপ্ন•||
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : অর্ণব দত্ত
দেশ : India , শহর : কোলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৭ , মার্চ
প্রকাশিত ১৪ টি লেখনী ২৫ টি দেশ ব্যাপী ৮৪৭১ জন পড়েছেন।
আজ সকালে ঘরে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। দেখছিলাম ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতির খতিয়ান। কত গাছ, কত প্রানী যে দেহ রেখেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই, কত মানুষ যে সর্বস্বান্ত হয়েছেন তাও কল্পনাতীত। মাথা নিচু করে পড়তে পড়তে ভাবছিলাম সব আক্রান্তদের দুঃখ-দূর্দশার কথা। এমন সময় এক ক্ষীণ না-মানুষী আওয়াজ শুনে মুখ তুলে দেখি আমাদের বারান্দার কার্নিশে এক মাছরাঙার আগমন হয়েছে। দেখেই চিনতে পারলাম। এমনিতেই আমাদের বাড়ির চারপাশে নানান পাখির আগমন লেগেই থাকে, এই লকডাউনের সময়ে তা বেড়েওছে, কিন্তু এই মাছরাঙাটি নিয়ম করে রোজ সকালে আর বিকেলে আমাদের বারান্দার কার্নিশে দর্শন দিত। আমাদের কার্নিশে বসে সে যখন ডাকতো, দূ-র থেকে সেই ডাকের সাথে সাথে জবাব আসতো, যেন বেতারে যোগাযোগ চলছে দুজনের মধ্যে। অন্যজনের গলার আওয়াজ শুনতাম, কিন্তু দেখতে পেতাম না; হয়তো আশেপাশের কোনো গাছ থেকে বসে ডাকত আরেকজন। আজ দেখি বাড়ির কার্নিশে বসে ইনি একমনে কি যেন ভাবছেন আর বিড়বিড় করছেন।

তা বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুধালাম, "কি রাঙাবাবু, এতো উদাস কেন"? জবাবে তিনি যা বললেন তাতে আমার ভাঙা মন আরও ভেঙে গেল। বললেন, "জানেন দত্তবাবু, আমার 'উনি' আর আমি, আমরা দুজনে মিলে রেললাইনের ওপারের পুকুর ধারের একটা কদম গাছে থাকতাম। কখনো আমি কখনো বা 'উনি' শিকারে যেতাম। গত সপ্তাহে যে কালবৈশাখী এলো, তাতে আমার 'উনি' পায়ে চোট পান। তাই ইদানিং আমি একাই শিকারে যেতাম আর একে অপরকে ডেকে নিজের উপস্থিতির কথাও বলতাম আর খাবারের যোগানের কথাও বলতাম। এই ঘূর্ণিঝড়ের দিন 'উনি' আমায় বারবার বারণ করেছিলেন দূরে কোথাও যাওয়ার ব্যাপারে, হয়তো আগের কালবৈশাখীর অভিজ্ঞতাতে আমায় সচেতন করতে চাইছিলেন। কিন্তু তার বারন সত্বেও শিকারে গেছিলাম, যেতে একপ্রকার বাধ্যই হয়েছিলাম জানেন এই লকডাউনের জন্যে। মানুষ তো পুকুরের মাছ সব জাল দিয়ে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, আমরা কি খেতাম বলুন! তারপর দুপুরে এলো সেই বিধ্বংসী ঝড়, সে তো চলল রাত অবধি; সে জন্যে আমি আর রাতের মধ্যে ফিরতে পারিনি। পরদিন সকাল সকাল ফিরে দেখি, যে গাছে আমরা থাকতাম সেই গাছটি পুকুরে পড়ে আছে আর জলে ওর উজ্জ্বল নীল ডানার কিছুটা ভেসে আছে। শোকে পাথর কিছুক্ষণ হয়ে দাঁড়িয়ে তারপরে আর থাকতে না পেরে উড়ে এলাম এখানে। বসে ভাবছিলাম, যদি সেই ঝড়ের দুপুরে ওর কথা শুনে না বেড়িয়ে একসাথে থাকতাম, তাহলে দুজনে কিছু একটা উপায়ে........."

শুনতে শুনতে আমিও আনমনা হয়ে গেলাম। ওর কথা শেষ হওয়ার পরেই আনমনে আবার বিড়বিড় করতে লাগল 'ক্ষমা প্রেমি ক্ষমা....'।

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল! মাথা নীচু করে পড়তে পড়তে কখন যে চোখ লেগে গিয়েছে বুঝতে পারিনি। তাহলে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম? সত্যিই যেন এটা স্বপ্ন হয়- এই ভাবতে ভাবতে ঘর থেকে বেরিয়েই দেখি উদাস মুখে এক মাছরাঙা বসে ক্ষীণ গলায় কু-র-র-র কু-র-র-র করে ডাকছে। স্বপ্নের সাথে বাস্তবের প্রেক্ষাপটের এরকম মিল আগে হয়নি কখনো আমার। আমায় দেখেই পাখিটা উড়ে গেল। কিন্তু আমার মনের মধ্যে স্বপ্নটা একটা বার্তা রেখে গেল - এই ঝড় যে কতজনকে তার কাছের কারোর থেকে আলাদা করে দিয়েছে তার কোনো হিসেব নেই।
রচনাকাল : ২৭/৫/২০২০
© কিশলয় এবং অর্ণব দত্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 15  France : 4  Germany : 1  India : 91  Ireland : 1  Russian Federat : 6  Saudi Arabia : 4  Sweden : 12  Ukraine : 6  
United States : 81  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 15  France : 4  Germany : 1  
India : 91  Ireland : 1  Russian Federat : 6  Saudi Arabia : 4  
Sweden : 12  Ukraine : 6  United States : 81  
© কিশলয় এবং অর্ণব দত্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
||•দুঃস্বপ্ন•|| by Arnab Dutta is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৭৫৬৩
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী