আজি পঁচিশে বৈশাখ… কবিগুরু প্রণাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫৭০৭৪ জন পড়েছেন।
নব আনন্দে জাগো আজি, বৈশাখের প্রথম পুণ্য প্রভাতে।
সব জ্বালা যন্ত্রণা যাক মুছে, আসুক এক নতুন ভোর।
এসো হে বৈশাখ ! এসো হে নতুন এসো
নিত্য নব নব সাজে।
এসো হে পঁচিশে বৈশাখ।
দিকে দিকে শুনি তার ডাক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর পত্নী সারদাসুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার শুধু ব্রাহ্ম আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তাই ছিল না, বরং সেযুগের কলকাতার শ্রেষ্ঠ ধনী ও সংস্কৃতিবান পরিবার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিল। কিন্তু এহেন পরিবারের সন্তান হয়েও পিতামাতার সান্নিধ্য থেকে দূরে ভৃত্য ও অন্যান্য আত্মীয়দের শাসনে ছেলেবেলা কেটেছিল রবীন্দ্রনাথের। তাঁর নিজের ভাষায় সে ছিল ‘ভৃত্যরাজক-তন্ত্র’। শৈশবে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রাণহীন বিদ্যার আয়োজনে বিতৃষ্ণ হয়ে শেষ পর্যন্ত বালক রবীন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তখন বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। অতি শৈশবে একবার জোড়াসাঁকোর বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গঙ্গাতীরে পানিহাটির বাগানবাড়িতে সেই প্রথম মুক্ত প্রকৃতির সংস্পর্শে আসেন তিনি।

প্রথম দেশভ্রমণের সুযোগ অবশ্য পেয়েছিলেন ১১ বছর বয়সে। ১৮৭৩ সালে তাঁর উপনয়ন হয়। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশভ্রমণের নেশা তাঁকে বছরের অধিকাংশ সময়ই দেশান্তরী করে রাখত। উপনয়নের পর দেবেন্দ্রনাথ পুত্রকে নিয়ে দেশভ্রমণে বের হন। প্রথমে তাঁরা আসেন শান্তিনিকেতনে। এখানে বসেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রথম নাটক ‘পৃথ্বীরাজ পরাজয়’ রচনা করেন। এই নাটকটির পাণ্ডুলিপি তাঁর জীব্বদশাতেই হারিয়ে যায়। শান্তিনিকেতনে কিছুকাল কাটিয়ে চলে যান পাঞ্জাবের অমৃতসরে। এখানে থাকাকালীন স্বর্ণমন্দিরে শিখদের ভজন ও উপাসনা পদ্ধতি চাক্ষুষ করেন পিতাপুত্র। এরপর আসেন ডালহৌসির নিকট বক্রোটা পাহাড়ের চূড়ায়। জায়গাটি বর্তমানে হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে, সেই সময় অবশ্য পাঞ্জাবেরই অন্তর্গত ছিল। বক্রোটার বাংলোয় দেবেন্দ্রনাথ নিজে বালক রবীন্দ্রনাথকে কিছু কিছু পাঠ দিতে থাকেন। পিতার কাছে এই সময় রবীন্দ্রনাথ সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাঠ নিতে থাকেন। পিতার অনুপ্রেরণায় উৎসাহিত হন মহামানবদের জীবনী, কালিদাসের ধ্রুপদি সংস্কৃত কাব্য-নাটক এবং উপনিষদ্ পাঠে। ফিরে এসে গৃহশিক্ষক জ্ঞানচন্দ্র ভট্টাচার্যের কাছে পাঠগ্রহণকালে রবীন্দ্রনাথ শেকসপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ ও কালিদাসের ‘কুমারসম্ভবম্’ নাটকের কিয়দংশ অনুবাদ করেন।

১৮৭৪ সালে ‘ভারতী’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৫ সালে বার্ষিক হিন্দুমেলা উৎসব উপলক্ষ্যে তিনি রচনা করেন ‘হিন্দুমেলার উপহার’। কবিতাটি প্রকাশিত হয় ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’য়। এই বছরই মাতৃবিয়োগ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের। ১৮৭৭ সালে ‘ভারতী’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়। এগুলি হল ‘মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা’, ভানুসিং-ভণিতাযুক্ত রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক কবিতাগুচ্ছ (যা পরবর্তীকালে ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়) এবং ‘ভিখারিণী’ ও ‘করুণা’ নামে দুটি গল্প। উল্লেখ্য, ‘ভিখারিণী’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটোগল্প। ১৮৭৭ সালেই দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অলীকবাবু’ নাটকে নামভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে রঙ্গালয়ে আবির্ভাব ঘটে নট রবীন্দ্রনাথের। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’। এটি রবীন্দ্রনাথের প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থও বটে। এই বছরই ন্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা’। নিজের ইংল্যান্ড বাসের অভিজ্ঞতার কথা ‘ভারতী’ পত্রিকায় পত্রাকারে পাঠাতে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। বড়োদাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের টীকা সহকারে ‘য়ুরোপযাত্রী কোনো বঙ্গীয় যুবকের পত্রধারা’ নামে প্রকাশিত হতে লাগল, সেই ভ্রমণবৃত্তান্ত। ১৮৮১ সালে ‘য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিতও হল সেটি। ‘য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র’ই রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্যগ্রন্থ তথা চলিত ভাষায় লেখা প্রথম বই। দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটানোর পর ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি ছাড়াই দেশে ফিরে এলেন রবীন্দ্রনাথ। সঙ্গে আনলেন পাশ্চাত্য সংগীতের সুর ও অপেরা নাট্যশৈলী সম্পর্কে কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতার ফসল ১৮৮১ সালের ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’। ১৮৮২ সালে রমেশচন্দ্র দত্তের কন্যার বিবাহসভায় সদ্যপ্রকাশিত ‘সন্ধ্যাসংগীত’ কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতা পাঠ করলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই কবিতা শুনে নিজের গলার মালা খুলে রবীন্দ্রনাথের গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

রবি ঠাকুরের বিখ্যাত কিছু উক্তি
(১)”লোকে ভুলে যায়, দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই।”
(২)”সামনে একটা পাথর পড়লে ,যে লোক ঘুরে না গিয়ে সেটা ডিঙিয়ে পথ সংক্ষেপ করতে চাই, বিলম্ব তারই অদৃষ্টে আছে।”
(৩)”সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ।”
(৪)”যে পুরুষ অসংশয়ে অকুণ্ঠিতভাবে, নিজেকে প্রচার করিতে পারে। সেই সমস্ত পুরুষ সহজেই , নারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে পারে।”
(৫)”তোমার পতাকা যারে দাও , তার বহিবারে দাও শক্তি।”
(৬) “অধিকার ছাড়িয়া দিয়া , অধিকার ধরিয়া রাখিবার মতো বিড়ম্বনা আর হয় না।”
(৭)”সোহাগের সঙ্গে রাগ না মিশিলে, ভালোবাসার স্বাদ থাকে না- তরকারিতে লঙ্কা মরিচের মতো।”
(৮)”শিমুল কাঠই হোক, আর বকুল কাঠই হোক আগুনের চেহারাটা একই।”
(৯)”আমরা বন্ধুর কাছ থেকে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্যও চাই, সেই জন্যই বন্ধুকে চাই।”
(১০)”ভালোবাসা কথাটা বিবাহ কথার চেয়ে , আরও বেশি জ্যান্ত।”

রবি ঠাকুরের আরও কিছু বিখ্যাত উক্তি আগামীপর্বে প্রকাশিত হবে। সাথে থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিজে বাঁচুন, অপরকে বাঁচতে সাহায্য করুন।
রোগমুক্ত জীবন যাপন করুন। জয়গুরু!

আমাদের একটাই দেশ। তা শুধু ভারতবর্ষ নয়, সারা দুনিয়া, গোটা বিশ্ব। একটাই জাতি, তা হল মানুষ। একটাই ভাষা, তা হল মানব ভাষা। একটাই ধর্ম তা হল মানবধর্ম। তাই তো আজও সারা বিশ্ববাসী বিশ্বকবির জয়গান করে-
এসো হে পঁচিশে বৈশাখ এসো এসো।
রচনাকাল : ১৪/৫/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 6  France : 1  Germany : 1  India : 67  Ireland : 17  Russian Federat : 3  Sweden : 10  Ukraine : 3  United States : 85  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 6  France : 1  Germany : 1  
India : 67  Ireland : 17  Russian Federat : 3  Sweden : 10  
Ukraine : 3  United States : 85  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
আজি পঁচিশে বৈশাখ… কবিগুরু প্রণাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩৮৫৭
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী