(কাব্য ও গীতির কোল ঘেসে প্রকৃতির ছায়তলে বসে সুনীবিড় সুশীতল অপরুপ মায়া ও শোভায় সুসজ্জিত প্রকৃতিকে নিয়ে লেখা গল্প)
আমি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এসেছি,,,, প্রতিবছর এখানে আসি, এখানে অতি সুমধুরভাবে আনন্দে ও উচ্ছাসে দিন কেটে যায় আমার।আমি অপেক্ষায় থাকি কবে ডাকবে আমায় ..................
আর একটা কথা বলা হয়নি, আমার এক বন্ধু আছে মানে প্রিয় মানুষ আর সে হচ্ছে আমার শিশির।
শিশির প্রতিবছর আমারি মত অপেক্ষায় থাকে কবে সময় আসবে একত্রিত হবার, এবারও চলে এলাম আমার শিশিরের ডাকে, শিশির আমায় ডাকলো ...............
শিশির:- কি হলো কবে আসছো তুমি?
আমি:- দেখো, কিছুতেই ছুটি মিলছে না।ছুটি পেলেই চলে আসবো।
শিশির:- তুমি প্রতিবারই এমন বাহানা করো, কবে আসবে বলোতো?
আমি:- বললাম তো ছুটি পেলেই আসছি।
(শিশির শরতের বাড়ির পাশ ঘেসে সাদা কাঁশবনের মাঝে নিত্য আসে আর আমাকে খুজে চলে যায়।শরৎ আমার বন্ধু সেও আসে এখানে ছুটি কাটাতে)
ও আপনাদের বলা হয়নি, পরিচয় দিয়ে নেই আমি হেমন্ত। শিশিরের প্রাণের চেয়েও প্রিয় বন্ধু।............
হেমন্ত:- ছুটি পেয়ে চলে এলাম ।
শিশির:- এই বুঝি তোমার সময় হলো?
হেমন্ত:- দেখো ছুটি না পেলে কি করবো বলো? এটা তো আমার কাজ কত প্রাণী আমারই অপেক্ষায় বসে থাকে।
শিশির:- আমি তো বসে থাকি না তাই না?
হেমন্ত:- সেটা কি বলেছি কখনও। দেখো শরৎ এসেছে ওখানে আর কেউ নেই তাই শরতের না ফেরা পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হয়।
শিশির:- তাই বুঝি তুমি আমাকেও ভুলতে চাও?
হেমন্ত:- তোমাকে কি ভোলা যায় বলো? তুমি আমার এখানে আসার আলো ও আশা, কত অপেক্ষার পর এখানে এসে তোমার সাথে মিলিত হই।
(ভোরের আলো ফুটতেই শিশির আমাকে বিদায় জানায়, ওকে যেতে হবে নইলে মা বকবে, কোথায় ছিল সে সারারাত) .........
নিত্য এমনি হয় ভোরের আলোর সাথে শিশির বিদায় নিয়ে চলে যায়, বড় একা লাগে তখন কিন্তু শেষ বিকেলের পরন্ত বেলায় আবার দুজনে মিলিত হয়) ............
শিশির:- কেমন আছ বলো?
হেমন্ত:- এতক্ষণ ভালো ছিলাম না, তবে এখন ভালো আছি।
শিশির:- এভাবে বলো না তো, আমার ভালো লাগে না তুমি তো জানো সারারাত তোমার কাছে তোমার বুকে মাথা রেখে থাকি ভোরবেলা না ফিরলে মা যে বকবে একটু বোঝার চেষ্টা করো।
(এমনি করে দিন কাটে হেমন্ত ও শিশিরের। হেমন্ত দিনে পশুপাখি সহ প্রাণীদের সাথে সময় অতিবাহিত করে আমার শেষ বিকেলে শিশিরকে জরিয়ে অনাবিল আনন্দে মেতে উঠে দুজন) ............
শিশির:- একটা কথা বলবো?
হেমন্ত:- বলো।
শিশির:- তুমি এখানেই থাকতে পারো না, আমাকে নিয়ে সারাটি জীবন....
হেমন্ত:- তা হয় না শিশির, আমি যে বাঁধা পড়ে আছি কিছু নিয়মধারায়।
শিশির:- তবে আর আসতে হবে না, আর আসিও না আমার কাছে।
হেমন্ত:- দেখো শস্যশ্যামলে ভরা প্রকৃতি কত সুন্দর, তাছাড়া মাঠ ভরা পাঁকা ধান ক্ষেত এসবের মায়ায় তো ছুটে আসি আমি এসব যে অনেক ভালো লাগে আমায়। আর তুমিও তো প্রতিনিয়ত ভোরে চলে যাও আমাকে একলা রেখে থাকতে পারো না আমার সাথে?
শিশির:- কি করে হবে বলো তুমি সেই আমাকে ফেলে রেখে যাও শীতের কোলে তাকে ঘিরেই তো থাকতে হয় দিবস রাত্রি।
হেমন্ত:- আমি বলি কি শীত যে তোমার অনেক বড় আপন তাই তোমাকে বেঁধে রাখতে পারি না আমি।
শিশির:- কেন? তুমি কেন আপন করে রাখতে পারো না?
হেমন্ত:- কি করে রাখবো বলো? ওই যে বললাম কিছু নিয়মধারায় বাঁধা পড়ে আছি।
শিশির:- তুমি থাকো তোমার নিয়মধারা নিয়ে, রাত শেষ হতে চললো এবার আমায় যেতে হবে।
(শিশির আবার চলে যায় হেমন্তকে একলা রেখে। যদিও তারা এতটা আপন নয় বেঁধে রাখার জন্য তবুও ছুটে আসে একজন আরেকজনের টানে। সূর্যাস্ত হতেই শিশির চলে আসে) ........
শিশির:- কোথায় তুমি? ঘুমালে নাকি?
হেমন্ত:- না তোমার আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।
শিশির:- এত ভালবাস আমায়?
হেমন্ত:- কি করবো বলো, ভালবাসি বলেই তো সব ফেলে তোমার কাছে ছুটে আসি প্রতিবছর। দেখো তোমার আমার ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে গাছ তার পাতা ঝড়ায় পুষ্পবৃষ্টির ন্যায়
(এভাবেই দিনের পর দিন রাতের পর রাত কেটে যায় একটা সময় শীত চলে আসে ছুটি কাটাতে, হেমন্ত শিশিরকে রেখে যায় শীতের কোলে বিদায়বেলা কত না কান্নাকাটি যা বৃষ্টির ন্যায় ঝড়ে পরে প্রকৃতির কোলে আর প্রকৃতিকে কুয়াশাচ্ছন্ন করে রাখে দিবস ও রাত্রি জুড়ে)
রচনাকাল : ১৩/১/২০২০
© কিশলয় এবং সুজন কুমার রায় কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।