ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড তৃতীয় পর্ব।
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭১ টি দেশ ব্যাপী ২৩৬৪০৪ জন পড়েছেন।
ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড তৃতীয় পর্ব।

বিয়ে নয় সিঁদুর খেলা
 লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

“মেয়েটি তোমার তো বেশ বড়সড় হয়েছে হে চাটুজ্যে! এবার একটা দেখেশুনে পাত্র যোগাড় করে মেয়ের বিয়েটা দিয়ে দাও। নইলে হিতে বিপরীত হবে। যা দিনকাল পড়েছে!” ভবতোষ হালদারের কথায় স্কুলমাস্টার প্রিয়ব্রত চ্যাটার্জীর মনে পড়ে আজ দশ তারিখ। এ মাসের বাড়িভাড়া ভবতোষবাবুকে দেওয়া হয় নি। তবুও মনে মনে লজ্জিত হয়ে তার কথায় সায় দেয়। বলে- “তা যা বলেছো ভায়া। দিনকাল খুবই খারাপ। সময়মতো মেয়েদের বিয়ে দিতে না পারলে…..” 

ভবতোষ হালদার এবার চড়া গলায় বলে ওঠে- চাটুজ্যে! আগামী মাসে ঘর খালি করে তুমি চলে যাবে। মানে তোমার মত ভাড়াটিয়াকে আমি আর রাখবো না।

ভবতোষ হালদার লোকটা খুব একটা ভালো লোক নয়। তাই তার মতো লোক না হলে তাকে চেনা ভারি মুশকিল। সময়ে অসময়ে পাড়া প্রতিবেশীদের টাকা ধার দেয়। কিন্তু উসুল করে দ্বিগুণ। সুদের কারবারে তিনি আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। বাড়ি ভাড়ার টাকায় তার সংসার চলে। 

প্রিয়ব্রত বলে- “দেখ ভায়া এই মাসে পেনশনটা পাই নি। তাছাড়া ঘরে চাল নেই। উপোষ করে দিন কাটছে। আগামী মাসে সুদ সমেত টাকাটা আমি মিটিয়ে দেব”।

“তোমার ছেলেটা মশাই একটা গাধা! বি.এ. পাশ করে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে তোমার স্কুলের চাকরিটাও গেল। আরে মশাই- গোটা কতক টিউশানি করতে বলছো না কেন?” 

অভাবী মা-বাবার একমাত্র সন্তান বিকাশ। অনার্স সহ বি.এ. পাশ করেও তার চাকরি হয় নি। বোন সুজাতাকে পাত্রস্থ করতে হবে, বাবার পেনশনের টাকায় তাদের সংসার চলে না। চারদিকে শুধু দেনা আর দেনা। বিকাশ ভাবতে পারে না।

অভাবের তাড়নায় বিকাশ বদলে যায়। সৎ ভাবে বাঁচতে সে চেয়েছিল। কিন্তু সমাজ, এই সমাজ তাকে বাঁচতে দেয় নি। তাই বাধ্য হয়ে বিকাশ রাজুয়া গুণ্ডার দলে নাম লিখিয়ে ছিল। রাজুয়া তাকে বলেছিল- “তাহলে বিকাশ! সত্যিই তুমি কাজ করতে চাও আমার দলে। তাহলে এসো। আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব কেমন করে পিস্তল ধরতে হয়, আর কেমন করে চালাতে হয়। দিনে দিনে তোমার শিক্ষা চলবে। তারপর একদিন তুমি হবে পাক্কা গুণ্ডা। তোমার নিশানা হবে অব্যর্থ।”

বি.এ. পাশের সার্টিফিকেট খানা বিকাশের কোন কাজেই লাগে নি। আজ রাজুয়া গুণ্ডার দলের সর্দার সে নিজে। মানুষ খুন করা আজ তার পেশা। বিকাশ আজ ভালভাবেই জানে যে এটা অনেস্টির যুগ নয়। সহজ সরলভাবে বাঁচতে চাওয়া কি অন্যায়। দেশে যদি ভালো মানুষের থাকার জায়গা না থাকে, তাহলে কি হবে সেই দেশ কে নিয়ে। মিথ্যা আর প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে আজ তাকে বাঁচতে হবে।

সুজাতার হাত ধরে প্রিয়ব্রত সেদিন বাড়ি খালি করে রাস্তায় এসে দাঁড়াল। সারাজীবন শিক্ষকতা করার পর এটাই তার প্রাপ্তি। মাথার উপর ছাদ নেই, পরণে বস্ত্র নেই। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রিয়ব্রত সেদিন ঈশ্বরকে বলেছিল। “হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর! দুঃখ যত পারো দাও, কিন্তু দুঃখকে ভোলবার আর যন্ত্রণাকে সইবার মতো শক্তি আমায় দিও ঠাকুর।”

বাটি হাতে মেয়ের হাত ধরে এবার পথে দাঁড়ায় প্রিয়ব্রত। বাবুদের কৃপাপাত্র হয়ে হাত পেতে ভিক্ষা চাইতে ওর বিবেকে বাঁধে। কিন্তু আজ বাধ্য হয়ে তাকে ভিক্ষার পাত্র হাতে তুলে নিতে হলো।

বিবাহযোগ্যা মেয়েটাকে সে পাত্রস্থ করতে পারে নি, এটা তার জীবনের পরম ব্যর্থতা। ছেলেটাকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করেও কুশিক্ষা তার কাছ থেকে তাকে জোর করে কেড়ে নিয়েছে। এটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। জীবনের শেষ সাঁঝের বেলায় আজ প্রিয়ব্রতর চোখে ভেসে ওঠে মানসীর মুখটা। অভিমান নিয়ে সে এই সংসার ছেড়ে চলে গেছে অন্য একজনের হাত ধরে। প্রিয়ব্রতের মনে হয় জীবনটা তার স্বপ্ন।

মানসী তাকে বলেছিল, তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে হয় নি। যা হয়েছিল সেটা শুধুমাত্র সিঁদুর খেলা ছাড়া আর কিছু নয়। আমি তোমার ছেলেমেয়ের দায়িত্ব নিতে পারবো না।
হাসতে হাসতে নিজের এটাচি গুছিয়ে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল মানসী। 

তারপর অনেক বছর কেটে গেছে। সুজাতা বড়ো হয়েছে। বিকাশ বড়ো হয়ে আদর্শ সন্তান হয়ে উঠেছে। প্রিয়ব্রতর সব ইচ্ছাই পূর্ণ হয়েছে। তার অন্তিম ইচ্ছা আজ যদি মানসী তার কাছে থাকতো তাহলে তার সংসারটা সুখের হতো। মানসী থাকলে মেয়েটারও বিয়ে হতো, সংসার হতো। ছেলেটাও অমানুষ হতো না।

প্রিয়ব্রতর চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে যায়।

সুজাতা বলে—“বাবা তুমি কাঁদছো? কেঁদো না বাবা। দেখবে মা একদিন আবার আমাদের কাছেই ফিরে আসবে।” 

টপ টপ করে দু’ফোটা অশ্রু আবার ঝরে পরে প্রিয়ব্রতর গাল বেয়ে।

রচনাকাল : ৯/১১/২০১৯
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 5  China : 23  France : 7  Germany : 2  India : 158  Ireland : 28  Russian Federat : 2  Sweden : 18  Ukraine : 6  United States : 114  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 5  China : 23  France : 7  Germany : 2  
India : 158  Ireland : 28  Russian Federat : 2  Sweden : 18  
Ukraine : 6  United States : 114  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড তৃতীয় পর্ব। by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৬২৯৮২
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী