ভালবাসা শুধু ভালবাসা (দশম পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৬৭৯৩৭ জন পড়েছেন।
ভালবাসা শুধু ভালবাসা  (দশম পর্ব) 

সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দাও 
            লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

রাণীগঞ্জ মোড়ের চৌমাথায় সেদিন হঠাৎ একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। বরযাত্রীদের বাসের পিছনে দ্রুতগামী একটা মালবাহী ট্রাক এসে সজোরে ধাক্কা মারলো। মারমুখী জনতা পথ অবরোধ করলো। পুলিশ এলো। কিন্তু ক্রুদ্ধ জনতাকে শান্ত করা গেল না। পুলিশ শান্তিরক্ষার জন্য গুলি চালায়। সেই গুলিতে সন্দীপ…..

“মরে গেছে!” সুদীপ্তার কণ্ঠে বিরাট জিজ্ঞাসা…???

সুদীপ্তাকে শান্ত করলো ওর ভাই অভয়। বললো- “মরে নি দিদি, গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলি লেগেছে বাঁ পায়ে। ডাক্তার বলেছে- পা টা কেটে বাদ দিতে হবে নইলে সারা শরীর বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে।”

হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠে সুদীপ্তা। এই তো জীবন! জীবনের প্রতি পদে পদে যে এত ভয়ংকর বিপদ লুকিয়ে থাকে তা কি জানতো সুদীপ্তা। কিছুই জানলো না সে। মাঝখানে একটা অবিচারের ঝড় এসে তার জীবনটা তছনছ করে দিল। সুদীপ্তা লগ্নভ্রষ্টা। কেউ আর তাকে বিয়ে করবে না। গভীর রাতে যখন দুঃসংবাদ পৌঁছাল তখন বিয়ের সানাই আর বাজলো না। এক এক করে সব আলো নিভে গিয়েছিল তখন। গভীর শোকে পরিবারবর্গ সবাই ভেঙে পড়েছিল। 

এদিকে লগ্ন পার হয়ে গেল। সুদীপ্তার জীবনে বয়ে নিয়ে এল এক অশুভ বার্তা। সে লগ্নভ্রষ্টা। এটাই তার একমাত্র পরিচয়।

তার ভাই অভয় তাকে বলেছিল- “তুই কাঁদিস না দিদি। দেখিস, সন্দীপদা তোকে আবার গ্রহণ করবে।”

পরদিন ঊষার আলো ফোটার আগেই সুপ্রভাতে অভয়কে সাথে নিয়ে সুদীপ্তা হাসপাতালে এলো। সন্দীপ শুয়ে আছে। অক্সিজেন চলছে। ডাক্তার নার্স সবাই বাধা দিয়ে বললো – “এখন কেউ যাবে না। পেসেন্ট সিরিয়াস!” শুধু দূর থেকে চোখের দেখা দেখে নিয়ে জলভরা চোখে বিদায় নিলো সুদীপ্তা।

দিন যায় রাত আসে। রাত কেটে ভোর হয়। 
শুরু হয়ে যায় নতুন দিনের আলো। 
এমনি করেই এক সপ্তাহ কেটে গেল।

আজ একটু সুস্থ আছে সন্দীপ। তাকে আজ নিয়ে যাওয়া হবে অপারেশন থিয়েটারে। পা কেটে বাদ দিতে হবে। সন্দীপ কাঁদে নি। কিন্তু সুদীপ্তার কথা মনে আসতেই মনটা বিষাদব্যথায় বিষণ্ণ হয়ে উঠলো। 

অপারেশন সাকসেসফুল। সন্দীপের বাঁ পা টা প্লাস্টার করা আছে। 
চলাফেরা করতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই অভয় আজ তার জন্য ক্রাচ কিনে নিয়ে এসেছে। এতদিন অভয়ের কাঁধে ভর দিয়েই সে আসা যাওয়া করছিল। আজ সে কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পেরেছে। এবার থেকে ঐ ক্রাচটাই হবে তার জীবনের 
নিত্য সঙ্গী।

নিয়তি কেন বাধ্যতে! তাই সন্দীপের জীবনে এত দুর্বিসহ যন্ত্রণা সহ্য করেও সে সুদীপ্তাকে ভুলতে পারে নি। তার প্রতিটি নিঃশ্বাসে সুদীপ্তার অনুভূতি সে অনুভব করে।
কিন্তু বিপদ কখনো বলে কয়ে আসে না। তাই বিয়ের সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই এতবড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। এর জন্য দায়ী কে? সন্দীপ ভাবতে থাকে।

সন্দীপ জানে – তার জীবনটা তো বরবাদ হয়েই গেছে। তাই সুদীপ্তার জীবনটাকে সে কখনোই বরবাদ হতে দেবে না। ভালো বর দেখে তাকে পাত্রস্থ করতে হবে তা না হলে সুদীপ্তা কোনদিনই সুখী হতে পারবে না। আর কিছু না হোক সে সুদীপ্তাকে ভুলে থাকতে তো পারবে। 

সুদীপ্তা ভাবে অন্য কথা। ভাবে সন্দীপ আর কোন কাজ করতে পারবে না। আজীবন তাকে তার মা বাবার কাছে বোঝা হয়ে থাকতে হবে। সন্দীপের ভাইবোনেরা সবাই তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখবে। সুদীপ্তা মনে মনে স্থির করে নেয়- সে সারাজীবন ধরে তাকে বুকে ধরে রাখবে। তার সারাজীবনের দায়িত্ব মাথায় নেবে। 

ক্রাচ বগলে ধীরপায়ে সেদিন সন্দীপ আসে সুদীপ্তার কাছে। সন্দীপকে দেখে সুদীপ্তা চমকে ওঠে। একি চেহারা হয়েছে তার। সারা মুখে বিবর্ণ দাগ নিয়ে কাটা পা নিয়ে ক্রাচ বগলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সে হাঁটছে। 
পাশের বাড়ি থেকে গান ভেসে আসছে- এ দেখাই শেষ দেখা নয়। 

সন্দীপ বলে- “আমাকে তুমি ভুলে যেও সুদীপ্তা! মনে করবে আমি নেই। কোন এক কুক্ষণে তুমি তাকে ভালবেসেছিলে। সেই ভালবাসাই তোমার জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে এলো। আমার মত একটা বিকলাঙ্গকে জীবনের সাথী করে তোমার জীবনকে অভিশপ্ত করে তোল না।”

-“অমন কথা বলো না সন্দীপ! না সন্দীপ, ছিঃ সন্দীপ, এমন কথা বলতে নেই। তোমাকে আমি কোনদিনই ভুলতে পারবো না।”

- “আমাকে নিয়ে তুমি কোনদিনই সুখী হতে পারবে না সুদীপ্তা। তুমি স্বামী চাও, পুত্র চাও, সংসার চাও, সেইসুখ বোধ হয় আমি কোনদিনই দিতে পারবো না। উপরন্তু আমি তোমার জীবনে একটা বোঝা হয়ে থাকবো। বল সুদীপ্তা কি তুমি চাও?”

- “আমি চাই তোমার মত উদ্দীপ্ত যৌবনভরা পুরুষ যে সুখে দুঃখে চিরকাল আমার পাশে পাশে থাকবে। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন সন্দীপ। তুমি অমত করো না। আমাকে তোমার চলার পথে জীবনসাথী করে নাও। লগ্নভ্রষ্টার সিঁথিতে আবার তুমি সিঁদুর পরিয়ে দাও।”

সেদিন গোধূলি লগ্নে সন্দীপ সুদীপ্তার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিল।

(প্রথম খণ্ডের শেষ পর্ব প্রকাশ দিলাম। ভালবাসা শুধু ভালবাসা প্রথমখণ্ড পর্বে পর্বে প্রকাশিত হওয়ায় সকলের কাছ থেকে পেয়েছি অনেক অনেক মন্তব্য। পেয়েছি সকলের অকুণ্ঠ সহযোগিতা। তাই সহৃদয় পাঠকগণের অনুপ্রেরণায় প্রাণিত হয়ে এরপর থেকে ভালবাসা শুধু ভালবাসা -দ্বিতীয় খণ্ড পর্বে পর্বে প্রকাশ দেওয়ার আশা রাখি। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!)

রচনাকাল : ৬/১১/২০১৯
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 5  China : 35  France : 7  Germany : 1  India : 165  Ireland : 28  Russian Federat : 7  Sweden : 18  Ukraine : 5  United States : 129  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 5  China : 35  France : 7  Germany : 1  
India : 165  Ireland : 28  Russian Federat : 7  Sweden : 18  
Ukraine : 5  United States : 129  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভালবাসা শুধু ভালবাসা (দশম পর্ব) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৩৯৭৯৭
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী