ভালবাসা শুধু ভালবাসা (নবম পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫৭২৭০ জন পড়েছেন।
ভালবাসা শুধু ভালবাসা  (নবম পর্ব) 

আশায় বাঁধি খেলাঘর
        লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

-হেই বাপ! তু মানুষ খুন করেছিস? ঝুমলি আঁতকে ওঠে। 

-মানুষ নয় রে ঝুমলি, আমি যাকে খুন করেছি সে একটা ব্রিটিশের পা চাটা কুত্তা। পঞ্চাশ কোটি ভারতবাসীর আশা আকাঙ্খাকে যারা দুপায়ে মাড়িয়ে দিতে পারে তাদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

-তুর কুথা হয়ত ঠিক। কিন্তু পুলিশ তুকে ছাড়বেক লাই। তুর জেহেল হতি পারে।

- না ঝুমলি। অরণ্যের ঘুম ভাঙছে। জেগে উঠেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য উত্তাল হয়ে উঠেছে। একদিন ব্রিটিশদের এদেশ ছেড়ে যেতেই হবে। হুঁসিয়ার সাবধান। 

-বাবুজি!

-এই কয়দিনে তোমরা আমার যা উপকার করেছো তার দাম হয়তো আমি কোন দিনই দিতে পারবো না। ভারতবর্ষের ইতিহাস যদি কোনদিন লেখা হয় তাতে হয়তো তোমার নাম লেখা থাকবে না। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার জন্য তুমি যা করলে তার দাম অনেক। একজন তরুণ বিপ্লবীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে না দিয়ে তাকে থাকার অধিকার দিয়ে তুমি আমার অনেক বড় উপকার করলে।

তারপর ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট। দেশ হল স্বাধীন। স্বাধীন ভারতবর্ষে উড়লো অশোক লাঞ্ছিত ত্রিবর্ণ পতাকা। স্বাধীনতার পর এক এক করে কতগুলো বছর কেটে গেল, কিন্তু বাবুজির কোন সংবাদ পেল না ঝুমলি। ঝুমলি আজও তাকে খুঁজে বেড়ায়। আজও সেই তরুণ বিপ্লবী তার হৃদয় জুড়ে আছে। ঝুমলির চোখে স্বপ্ন তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার। জীবনের বালুচরে বাঁধা এরকম কত ঘরই যে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে কে তার খবর রাখে?

অথচ আজও শাল পিয়ালের বনে মোরগেরা ডেকে ওঠে। বাঁশের বাঁশির সুরে সাঁওতালেরা মাদল বাজায়। মহুল বনে মহুলের নেশায় সবাই যখন মাতাল হয়ে ওঠে ঝুমলি ভাবে এটা সামাজিক রীতি নয়। মাতাল হওয়াটা আজ তাদের কাছে স্বাভাবিক বলেই আদিবাসী সমাজে স্বীকৃতি পেয়েছে।

ঝুমলি কিন্তু আজও বিয়ে করে নি। ঝুমলি তার বাবাকে দেখে নি। জন্মের পরে মাকে হারিয়েছে। তার মা মারা যাবার পর দাদু তাকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে।

তার দাদু মংলি মাঝি তাকে শিখিয়েছে- “মত ডর বিটিয়া। তু জিন্দা বাঘের সাথে ঘর করবি, মহুলের নেশায় বুঁদ হয়ে পাহাড়ী চিতা বুকে লিয়ে লাচবি। তুই মংলি মাঝির লাতিন বুঠে। তুহার ডর করলে চলবেক নাই।”

সেই দাদুকে হারানোর পর অনেকেই তাকে বিহা করার জন্য কথা বলেছে কিন্তু ঝুমলি রাজি হয় নাই। বাকি জীবনটা সে এভাবেই কাটিয়ে দেবে। 
শাল পিয়ালের বনের ধারে অজয় নদী তির তির করে বয়ে চলে।

মাঝিরা সুর করে ভাটিয়ালি গাইছে-
ও পরাণ বন্ধু রে……….
সাধ করে তুই বালুচরে কেন বাঁধলি খেলাঘর।
জীবননদীর ঝড় তুফানে ভাঙবে তোর সে ঘর।
আমি আশায় বাঁধি খেলাঘর।

গানের সুরে সুর মিলিয়ে ঝুমলি তারে আজও ডাকে- “বাবুজি তু ফিরে আয়, তু ফিরে আয়। হামি তুহার লাগি আজও বিহা করি লাই। তু ফিরে আয় বাবুজি তু ফিরে আয়”।
ঝুমলির দু’চোখ জলে ভরে আসে। 

ঝুমলির কান্না ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে কান্না হয়ে নেমে আসে অজয় নদীর বাঁকে। বলাকারা পাখা মেলে নীল আকাশে উড়ে যেতে যেতে এখানে এসে থমকে দাঁড়ায়। হয়তো এখানে কোথাও লুকিয়ে আছে কোন এক অজানা তরুণ বিপ্লবী আর ঝুমলির নীরব ভালবাসার ইতিকথা। 

ঝুমলি নীল আকাশের দিকে আজও চেয়ে থাকে। সোনালী আলোয় অজয়ের চর রঙিন হয়ে আসে। ধীরে ধীরে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। নীল আকাশে চাঁদ ওঠে। শাল পিয়ালের বনে জোছনার লুকোচুরি চলে। ঝুমলির চোখে ঘুম নেই। অজয় নদীর বাঁকে শেয়াল কেঁদে ওঠে।  

রচনাকাল : ৫/১১/২০১৯
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 27  France : 8  Germany : 3  India : 166  Ireland : 31  Russian Federat : 3  Sweden : 18  Ukraine : 5  United States : 145  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 27  France : 8  Germany : 3  
India : 166  Ireland : 31  Russian Federat : 3  Sweden : 18  
Ukraine : 5  United States : 145  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভালবাসা শুধু ভালবাসা (নবম পর্ব) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৪০৫১
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী