শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
তৃতীয় পর্ব- আগমনী কাব্য-৩
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক! শিউলি ফুল, স্বচ্ছ আকাশ, মায়াবী জ্যোরস্নার কারণেই এমন নাম হয়েছে। তবে এর মধ্যে অন্যতম কাশফুল। প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশের মাঠে-ঘাটে কাশফুলের দেখা মেলে। এমনকি প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে এদেশে কাশফুল ছিল। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে।
কাশফুলের জাত ভাইয়ের নাম কুশ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘পুরাণ’-এ কুশের স্থান খুব উঁচুতে। সেখানে ব্রাহ্মণ বড় নাকি কুশ বড় এই নিয়ে বিবাদও লক্ষ্য করা যায়। শেষ পর্যন্ত কুশকে ব্রাহ্মণের প্রতিভূ হিসেবে স্থান দেয়া হয়েছে। আর এর পেছনের কারণ হল ঔষধি গুণ। সাহিত্যে কাশফুলের কথা নানাভাবে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন গ্রন্থ ‘কুশজাতক’ কাহিনী অবলম্বন করে ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন।
কাশফুল মনের কালিমা দূর করে। শুভ্রতার অর্থেও ভয় দূর করে শান্তি বারতা বয়ে আনে। শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়। মূল ব্যবহার হয় ঔষধি হিসেবে। কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। যেমন- পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। শরীরের রঙ হলে উঠে দিনদিন শুভ্র ॥ এছাড়াও শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়।
কাশফুলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক বৈজ্ঞানিক নাম হল Saccharum spontaneum. এরা ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। চিরল পাতার দু’ধারে খুবই ধার। পালকের মতো নরম এর সাদা ফুল।
আর তাই তো শরতের শিউলী ফুল নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম গেয়েছেন :
‘শিউলী ফুলের মালা দোলে/ শারদ রাতের বুকে ঐ’।
শরতের প্রথম প্রভাতে সেই শিউলিফুল ফুটবে, তার বিকশিত রূপ আর গন্ধ ছড়াবে বাতাসে। আমোদিত হবে প্রকৃতি আর সেই সাথে প্রফুল্ল এবং উৎফুল্লচিত্ত হয়ে উঠবে মানুষ এবং এই রসহীন নগরজীবনে যারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, তারাও সচকিত হবে শরতের সুরভিমাখা নিমন্ত্রণে। সেই কবে যারা পল্লির স্নেহসান্নিধ্য ছেড়ে জীবিকার তাগিদে ইট-পাথরের বিরস কঠিন-কঠোর নগরযাপন শুরু করেছে, তারাও আজ উপলব্ধি করবে : সত্যিই তো শরৎ এসেছে, আকাশে-বাতাসে তারই সৌরভ, প্রীতিগন্ধময় আবেশ ছড়ানো পরিবেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-
শিউলির ডালে কুঁড়ি ভরে এল
টগর ফুটিল মেলা,
মাধবী লতায় খোঁজ নিয়ে যায়
মৌমাছি দুই বেলা।
শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
তৃতীয় পর্ব- আগমনী কাব্য-৩
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয়ের নদীধারে আমাদের গাঁয়ে,
পাথরচুড় গ্রামটি রাঙাপথ বাঁয়ে।
ঠিকানা হিজলগড়া জিলা বর্ধমান,
জন্ম মাটি স্বর্গ ধাম মিলন মহান।
শরতের সোনারোদ ঝরে আঙিনায়,
ভক্তরা খঞ্জনি নিয়ে আগমনী গায়।
একতারা হাতে নিয়ে বাউলের গান,
গান শুনে প্রফুল্লিত সবাকার প্রাণ।
শেফালীর বৃন্তে জমে থাকা অভিমান,
শরতের সোনা রোদে আগমনী গান।
আগমনী সুর ভাসে নদীচর ঘেঁষে।
লুকায় অরুণ রবি দিবসের শেষে।
দিন যায় রাত আসে শরতের গান,
শরতের জোছনায় মেতে উঠে প্রাণ।
রচনাকাল : ১৭/৯/২০১৯
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।